পাবনার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়ীয়া ইউনিয়নের গুপিনপুর গ্রামের মৃত জানু বিশ্বাসের ছেলে বিএম ফারুক হোসেন ২০০২ সালে দশম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় বিয়ে করেন উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের উলাট গ্রামের ময়েন উদ্দিন মোল্লার মেয়ে মোছা. জাকিয়া সুলতানাকে। ২০০৩ সালে তাদের দুজনেরই এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও সন্তান গর্ভে আসায় এবং সাংসারিক চাপে শেষ পর্যন্ত আর পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি। পরে ২০২২ সালে খয়রান লুকমান হাকিম টেকনিক্যাল স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন এই দম্পতি।

এ বছর বাবা-মা ও ছেলে একই সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে সবাই পাশ করেছেন। বাবা বিএম ফারুক হোসেন জিপিএ ৪ দশমিক ৭১, মা মোছা. জাকিয়া সুলতানা জিপিএ ৪ দশমিক ২৫ এবং ছেলে বিএম হুজ্জাতুল ইসলাম ফাহিম জিপিএ ৪ দশমিক ১৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে সাতবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজের বিএম শাখা থেকে বাবা-মা ও ছেলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ (ইংলিশ ভার্সন) থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) এইচএসসির ফল প্রকাশের পর এমন সাফল্যে পরিবার-পরিজনসহ এলাকাবাসীর প্রশংসায় ভাসছেন তারা।

সুজানগরের সাতবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল বাছেত বাচ্চু বলেন, বিএম ফারুক ও তার স্ত্রী জাকিয়া তার প্রতিষ্ঠান থেকে ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ভালোভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ছেলের সঙ্গে বাবা-মা পাশ করার এ সাফল্য সমাজের অনেককে অনুপ্রাণিত করবে। তাদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। বর্তমানে অল্প শিক্ষিতদের মাঝেও উচ্চশিক্ষা গ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে।

মা- বাবার সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করায় উচ্ছ্বসিত ছেলে বিএম হুজ্জাতুল ইসলাম ফাহিম। তিনি বলেন, আমরা অনেক কষ্টের মাঝেও পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। আমার মা সংসার সামলিয়ে ও বাবা অর্থ উপার্জনের মাঝেও পরীক্ষা দিয়েছেন এবং ভালো ফলাফল নিয়ে পাস করেছেন। এ জন্য আমি অত্যন্ত খুশি। আমাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন যাতে পড়াশোনা শেষ করে দেশের জন্য কাজ করতে পারি।

মা জাকিয়া সুলতানা বলেন, ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল উচ্চ শিক্ষায় পড়াশুনা করব। কিন্তু মা-বাবার সংসারে সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি। তবে ধীরে ধীরে এইচএসসি পাশ করার আশা জাগে। আমি আমার স্বামী ও ছেলের পরামর্শে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সুজানগর উপজেলার সাতবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজের বিএম শাখায় ভর্তি হই। আমার সঙ্গে স্বামীও ভর্তি হন। মাঝে মাঝে ক্লাস করতাম আমরা।
এবার এইচএসসি (সমমান) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছি। এতে আমি খুব আনন্দিত।

বাবা বিএম ফারুক হোসেন বলেন, অল্প বয়সে ২০০২ সালে আমার বিয়ে হয়। এরপর সংসারের হাল ধরায় লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে হয়। যখন একটু আর্থিকভাবে সচ্ছলতা আসতে শুরু করে, তখন ভাবলাম এখন অন্তত এইচএসসি পাশ করা দরকার। তাই এই কলেজে আমরা স্বামী ও স্ত্রী ভর্তি হই ও পরীক্ষা দিয়ে পাশ করি। আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো লাগছে। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমরা যাতে সামনে অনার্স মাস্টার্সও পাশ করতে পারি।

সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মীর রাশেদুজ্জামান রাশেদ বলেন, বিষয়টি আমরা ইতোমধ্যে জানতে পেরেছি। বাবা-মা ও ছেলে এইচএসসিতে ভালো ফলাফলে উত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টিকে আমরা খুব ইতিবাচকভাবে দেখছি। সমাজে কম শিক্ষিত মানুষের মাঝেও উচ্চশিক্ষা গ্রহণের আগ্রহ বাড়ছে।

রাকিব হাসনাত/এফআরএস