সারাদেশের মতো শরীয়তপুরেও প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ অন্যান্য রোগীর চাপ। ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি রোগীকে সেবা দিতে শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বুধবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে এমন চিত্র দেখা গেছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ শরীয়তপুরের সকল উপজেলার গরিব ও অসহায় মানুষ উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রতিদিনই ভিড় করে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে। সারাদেশের মতো শরীয়তপুরেও বাড়ছে ডেঙ্গু, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, জ্বর, ঠাণ্ডাসহ রোগীর সংখ্যা। ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে রয়েছে জনবল সংকট। প্রতিদিনই ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি রোগীর চাপ থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের ওষুধসহ চিকিৎসার বিভিন্ন উপকরণ দিতে হিমশিম খাচ্ছে। অন্যদিকে কাঙ্ক্ষিত উন্নত চিকিৎসা সেবাও ব্যাহত হচ্ছে। 

ডেঙ্গু রোগীর জন্য হাসপাতালে বরাদ্দকৃত শয্যা সংখ্যা ৮ হলেও হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন ১২ জন রোগী। ডায়রিয়া রোগীদের জন্য ১০ শয্যা থাকলেও বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন ৪২ জন। শিশুদের জন্য বরাদ্দকৃত ১৪ শয্যার বিপরীতে ভর্তি আছেন ৪৯ জন। সার্জারি, মেডিসিন ও গাইনি রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত ৪৫ শয্যার বিপরীতে রয়েছেন ১১৯ জন রোগী। সব মিলিয়ে বুধবার ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২৮৮ জন। হাসপাতালটির ১০০ শয্যার বিপরীতে এই দ্বিগুণ সংখ্যক রোগীকে উন্নত সেবা দেওয়া ব্যাহত হয়। দ্বিগুণ সংখ্যক রোগীর ওষুধসহ চিকিৎসা উপকরণ ও খাবার দিতে বেগ পোহাতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।

আশরাফ সিকদার হাসপাতালে এসেছেন তার নাতির চিকিৎসার জন্য। কিন্তু অতিরিক্ত রোগীর চাপে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে নিয়েছেন চিকিৎসা সেবা। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, নাতির জ্বর, ঠাণ্ডা। কিছুতেই কমছে না। চিকিৎসক বলেছেন, ঢাকা নিয়ে যেতে। এখন আমি নাতিকে নিয়ে ঢাকা যাব।

১০ মাস বয়সী আবরার ইসলাম অসুস্থ থাকায় তার বাবা আব্দুল করীম দুই দিন ধরে এসেছেন হাসপাতালে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বমি ও ডায়রিয়া সমস্যা বাচ্চার। ডাক্তার দেখেছেন। এখন রিপোর্ট দেখার অপেক্ষায় আছি।

তামান্না নামে একজন বলেন, আমার মা তিন দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। ডাক্তার বলেছে দ্রুত ঢাকা নিয়ে যেতে। এখন রিপোর্ট এলেই আমরা ঢাকা নিয়ে যাব।

হালেম মিয়া নামে একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বলেন, হাসপাতালে ঠিক মতো ওষুধপত্র পাওয়া যায় না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয় বাইরে। আমি নিজেও বাইরে থেকে পরীক্ষা করিয়েছি।

তাহেরজান নামে এক মা তার ডেঙ্গু আক্রান্ত ছেলেকে নিয়ে এসেছেন হাসপাতালে। তিনি অভিযোগ করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডেঙ্গু ওয়ার্ডের ওয়াশরুম নোংরা, অন্যদিকে ওয়াশরুমের দরজার সিটকিনি নেই। মহিলা মানুষ ঠিকমতো ওয়াশরুমে যেতে পারি না। নোংরা পরিবেশের কারণে রোগী আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যায়।

১০০ শয্যা বিশিষ্ট শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ১০০। জনবল সংকট রয়েছে। কিন্তু প্রতিদিনই ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। জনবল সংকট ও রোগী বেশি হওয়ায় সেবা প্রার্থীদের কাঙ্খিত উন্নত চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় আমাদের। বর্তমানে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সারাদেশের মতো শরীয়তপুরেও বেড়েছে। প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে ভর্তি হয় রোগীরা। এখনো পর্যন্ত শরীয়তপুরে কোনো ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী মারা যায়নি।

সাইফ রুদাদ/আরএআর