রাজশাহীর ফলাফলে টানা ৪ বছর শীর্ষস্থান ধরে রেখেছেন ছাত্রীরা
এইচএসসি ফলাফলে টানা চার বছর ধরে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছেন রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের ছাত্রীরা। পাস আর জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে ৪ বছর ধরে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে সেরা তারা। ভালো ফলের কৃতিত্বের বিষয়ে শিক্ষকরা বলছেন, এখনকার ছাত্রীরা অনেক মেধাবী। ছাত্রীরা অলস সময় কাটায় না। কলেজের ক্লাসের বাইরে তারা বাসা বা কোচিংয়ে পড়াশোনায় মনোযোগী।
রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের ২০২১ থেকে ২০২৪ সালে এইচএইসি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণে এমন তথ্য ওঠে এসেছে। ফলাফলে দেখা গেছে, একেক বছর একেক জেলা এইচএসসির ফলে সেরা হয়েছে। কিন্তু বিগত ৪ বছর ধরে নিজেদের সেরাটা ধরে রেখেছেন ছাত্রীরা।
বিজ্ঞাপন
শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন ৭১ হাজার ৮১৭ জন ছাত্র। তাদের পাশের হার ৭৬ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১০ হাজার ৩০৫ জন ছাত্র। গত বছর ২০২৩ সালে ৭৩ হাজার ২২৩ জন ছাত্র পরীক্ষায় অংশ নেন। ছাত্রের পাশের হার ৭৩ দমমিক ৫৫ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৫ হাজার ৪৪৫ জন ছাত্র। ২০২২ সালে ৬৬ হাজার ৯৩৪ জন ছাত্র পরীক্ষায় অংশ নেন। ছাত্রদের পাশের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯ হাজার ৮৯৮ জন ছাত্র। এছাড়া ২০২১ সালে ৭৭ হাজার ৭২৯ জন ছাত্র এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। সেবছর পাশের হার ছিল ৯৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১৪ হাজার ৪০০ জন।
অপরদিকে, চলতি বছরের পরীক্ষায় শিক্ষাবোর্ড থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন ৬৫ হাজার ৩৬৭ জন ছাত্রী। তাদের পাশের হার ৮৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৪ হাজার ৫৯৭ জন ছাত্রী। গত বছর ২০২৩ সালে পরীক্ষায় অংশ নেন ৬৫ হাজার ১৬৭ জন। পাশের হার ৮৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫ হাজার ৮১৩ জন ছাত্রী। ২০২২ সালে ৫৯ হাজার ৭৫৭ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নেন। তাদের পাশের হার ৮৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১১ হাজার ৯৫৭ জন। এছাড়া ২০২১ সালে ৬৯ হাজার ৭৫৫ জন ছাত্রী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। পাশের হার ৯৮ দশমিক ৫১ শতাংশ। সে বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১৮ হাজার ৪০০ জন ছাত্রী।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বেলা ১১টায় এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড। এরপরে শিক্ষাবোর্ডের অধীনে অংশ নেওয়া ৭৪১টি কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার ফল একযোগে প্রকাশ করা হয়। এবছর এইচএসসিতে পাসের হার ৮১ দশমিক ২৪ শতাংশ।
এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া মোসা. সালমা নামের এক পরীক্ষার্থী বলেন, আসলে পড়াশোনা ভালোভাবে করে ভালো পরীক্ষা দিলে কাঙ্খিত ফল পাওয়াটাই স্বাভাবিক। মেয়েরা কলেজের ক্লাস, প্রাইভেট বা কোচিং শেষে বেশির ভাগ বাসা বা মেসে গিয়ে পড়াশোনায় বসে। মেয়েদের রাতভর আড্ডা দেওয়ার তেমন সুযোগ নেই। সেটা পরিবার হোক, আর বাইরে মেসে থেকেই হোক না কেনো। সেই জায়গা থেকে ছেলেরা অনেকটাই স্বাধীন।
অর্পা নামের আরেক পরীক্ষার্থী বলেন, মেয়েরা তো চায় পড়াশোনা করতে। কিন্তু অনেক সময় পরিবার থেকে সেরকম সাপোর্ট পায় না। বাল্যবিয়ের শিকার হয়। এছাড়া শিক্ষাগ্রহণের খরচ মেটানো কষ্টকর হয় অনেক পরিবারের পক্ষে। সেই জায়গা থেকে লেখাপাড়া থেকে ছিটকে পড়ে অনেকেই। বর্তমান সময়ে মেয়েরা বিভিন্ন বৃত্তি ছাড়াও নানান সরকারি-বেসরকারি সুযোগ সুবিধা পায়। এছাড়া বর্তমান সময়ে মেয়েদের পরিবারের মা-বাবা অনেক সচেতন হয়েছেন। তারও চান সন্তান পড়াশোনা করুক।
রাকিব নামের এক পরীক্ষার্থী বলেন, আসলে ভালো ফল করাটা নিজের মধ্যে। পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে পড়াশোনার বিকল্প নেই। ভালো ফল করতে হলে পড়াশোনা করতে হবে। সেটা ছেলে বা মেয়ে যে পরিশ্রম করবে সে ফল পাবে। ভালো পড়াশোনা করে পরীক্ষার খাতায় ভালো লিখলে ভালো ফল আশা করা যায়। সেই জায়গা থেকে মেয়েরা এগিয়ে আছে।
এ বিষয়ে অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সাইফুল হক বলেন, বিগত কয়েক বছর থেকে পরীক্ষায় মেয়েরা ভালো করছে। পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে এগিয়ে থাকছে মেয়েরা।
এ বিষয়ে রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. জুবাইদা আয়েশা সিদ্দীকা বলেন, মেয়েদের পরিবার অনেক সচেতন হয়েছে। তারা চায় মেয়েরা লেখাপড়া করুক। আমাদের সময়ে এটা ছিল না। আমাদের অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করতে হয়েছে। নারী শিক্ষায় বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ছিল। যেমন- শিক্ষাগ্রহণের জন্য শহরগুলোতে থাকার অসুবিধা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কলেজ পর্যায়ের হলগুলোতে বিভিন্ন সমস্যা। রাস্তাঘাটে নানাভাবে হয়রানির ঘটনা ঘটতো। এছাড়া বাল্যবিয়ে, পরিবার থেকে পড়াশোনা করাতে অনিহা ছিল।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে। মেয়েদের পরিবার চায় পড়াশোনা করাতে। এখনকার ছাত্রীরা অনেক মেধাবী। ছাত্রীরা অলস সময় কাটায় না। কলেজের ক্লাস, প্রাইভেট বা কোচিংয়ের পরে তারা বাসা বা কোচিংয়ে পড়াশোনায় মনোযোগী।
শাহিনুল আশিক/পিএইচ