ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির হাফেজ মাওলানা আব্দুল আওয়াল বলেছেন, বার বার আমরা একই ধোঁকায়, একই প্রতারণায় প্রতারিত হয়ে পথভ্রষ্ট হচ্ছি। সামনে আর যেন আমরা প্রতারিত না হই, ধোঁকাবাজদের ধোঁকায় যেন না পড়ি, সেটি মনে রাখতে হবে। এই আওয়ামী সরকারের যে লুটতরাজ, জুলুম-নির্যাতন, আওয়ামী সরকারের যে আয়নাঘর, এটাতো নমরুদের অগ্নিকুণ্ডলিকেও হার মানিয়েছে। 

সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে নগরীর নিউ মার্কেট সংলগ্ন বায়তুন নূর মসজিদ চত্বরে সোনাডাঙ্গা মডেল থানা ইসলামী আন্দোলনের উদ্যোগে গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

আব্দুল আওয়াল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের যে চুরি-ডাকাতি, এই চুরি-ডাকাতি সারা বিশ্বের মধ্যে তুল না হয় না। এতো চুরি-ডাকাতি তারা করেছে। আমরা দাবি করেছি, দুর্নীতিবাজদের বিচার চাই। দুর্নীতি করে বিদেশে যে টাকা পাচার করেছে, এই টাকা উদ্ধার করে জনগণের কোষাগারে জমা করতে চাই। এই দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার আমরা কামনা করেছি। দুর্নীতির অবসান করতে হলে দুর্নীতিবাজদের বিচার করতে হবে। বিচার না করলে দুর্নীতি বন্ধ হবে না।

তিনি বলেন, খুলনা শহরকে লুটেপুটে খেয়েছে, জনগণের বসবাসের অনুপযোগী শহর বানিয়েছে, প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে মহল্লায় গাড়ি নিয়ে ঢোকার কায়দা নেই। চলাচলের অনুপযোগী একটি শহরে পরিণত করেছে। কাজেই চোর-ডাকাতের হাত থেকে খুলনা সিটি কর্পোরেশনকে মুক্ত করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে মুক্ত করতে হবে। এই খুলনা শহরকে বাংলাদেশের মধ্যে সুন্দরবনের মতো পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

আব্দুল আওয়াল বলেন, টেক্সটাইল মিলের শত শত কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়ে গেছে, দুর্নীতিবাজরা দুর্নীতি করে চলে গেছে। খালিশপুরের নিউজ প্রিন্ট মিল, ক্রিসেন্ট মিলসহ মিলগুলোতে হাজার হাজার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতো। এই দুর্নীতিবাজদের কারণে তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ভারতে জুট মিল চলে, বাংলাদেশে কেন চলবে না। ভারতে জুট মিলে কোনো অসুবিধা নেই। বেসরকারি জুট মিল চললে অসুবিধা নেই। কিন্তু সরকারি জুট মিল দুর্নীতিবাজদের কারণে সব নষ্ট হয়ে বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ সমস্ত দুর্নীতিবাজদের বিপক্ষে রুখে দাঁড়াই, তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাই।

আগামী নির্বাচন বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে প্রতীক থাকবে, প্রার্থী থাকবে না। প্রার্থী যদি থাকে পেশিশক্তি, কালো টাকা ব্যবহার করে মানুষ খুনাখুনি হবে। অনেক মানুষের জীবন যাবে। প্রতীকে নির্বাচন হলে খুনাখুনি হবে না, প্রশাসনকে কিনবে না, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। জাতীয় সরকার গঠন হবে। তাহলে দেশে জনগণের সরকার গঠিত হবে। ইসলামী আন্দোলন আরও ১০ বছর আগে এই মতবাদ দিয়েছে।

তিনি বলেন, বার বার ভুল করলে তো হবে না। ৫ আগস্ট যারা রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে, তাদের রক্ত আর জীবন বৃথা যেতে দেওয়া যায় না। সেই রক্ত আর জীবনের প্রতি তো গাদ্দারি করা যায় না। আসুন আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে একটি সুখী-শান্তিময় দেশ হিসেবে গড়ে তুলি। আসুন আমরা হানাহানি, দলাদলি বাদ দিয়ে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাসুলের (সা.) আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য সকলে চেষ্টা করি। ইসলামী আন্দোলন চায় রাসুলের (সা.) আদর্শ বাস্তবায়ন করতে। রাসুলের (সা.) আদর্শ বাস্তবায়ন হলে দুর্নীতি, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি থাকবে না। এদেশের মানুষ সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানার সভাপতি মোল্লা রবিউল ইসলাম তুষারের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মোহাম্মদ কবির হোসেন হাওলাদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা মহানগরের সহ-সভাপতি শেখ মো. নাসির উদ্দিন, নগর সেক্রেটারি মুফতি ইমরান হোসাইন, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি প্রভাষক আবু গালিব, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা সাইফুল ইসলাম, ডা. এস এম সেলিম হোসাইন।

গণসমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়কারী সাজিদুর রহমান বাপ্পি, ইসলামী আন্দোলনের নেতা আবু তাহের, শেখ হাসান ওবায়দুল করীম, হাফেজ আব্দুল লতিফ, সরোয়ার হোসেন বন্দ, মাওলানা নাসিম উদ্দিন, আব্দুল্লাহ আল মাসুম, গাজী ফেরদৌস সুমন, গাজী মিজানুর রহমান, আলফাত হোসেন লিটন, মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, মো. আব্দুস সালাম, মোহাম্মদ সজিব, আবুল কালাম আজাদ, মো. ইব্রাহিম খান, ইমরান হোসেন মিয়া, মো. আব্দুস সবুর, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মাহাদি হাসান মুন্না, মোস্তফা আল গালিব প্রমুখ।   

মোহাম্মদ মিলন/আরএআর