কুয়াকাটায় যুবদল নেতার বিরুদ্ধে স্থানীয়দের হয়রানির অভিযোগ
পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নজির আকনের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনুসারীদের নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির বসতঘরে হামলা, চাঁদা দাবি ও মারধর করে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ দিলেও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যদিও সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যুবদলের এই নেতা।
দলীয় পদে থেকে বিগত দিনে নিষ্ক্রিয় থাকলেও ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সহযোগীদের নিয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন নজির আকন। তারই ধারাবাহিকতায় ৬ আগস্ট কুয়াকাটা পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডেরর হোটেল ব্যবসায়ী রনি বেগমের মালিকানাধীন আবাসিক হোটেল ও বসতঘরে হামলা, ভাঙচুর এবং মালামাল লুটপাট করেন।
বিজ্ঞাপন
নজির আকনের নেতৃত্বে ৫২ ব্যাগ সিমেন্ট, ৫০ কাটন টাইলস ও পানি উত্তোলনের একটি মটর নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া হোটেল থাকা নগদ ৫০ হাজার টাকাও নিয়ে যায়। একই দিন হামলা ও ভাঙচুর চালায় ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেনের মালিকানাধীন নিউ কুয়াকাটা হোটেলে। নিয়মিত চাঁদা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলে এই হামলা-লুটপাট চালানো হয় বলে জানা গেছে।
রনি বেগম বলেন, আমরা খুব আতঙ্কে থাকি নজির আকনের কারণে। এক দফা হামলা চালিয়েছে। এখনো বিভিন্ন সময়ে ভয়ভীতি দেখায়।
গত ৯ আগস্ট রাত ১০টার দিকে কুয়াকাটা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেনের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে বাউন্ডাড়ি ওয়াল এবং বাড়ির গেট ভেঙে ফেলে।
সাদ্দাম হোসেন বলেন, দলীয় প্রভাব বিস্তার করে বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন নজির আকন। আমার বাড়িতে যেদিন হামলা চালিয়েছে আমি ভাগ্য ভালো পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পেয়েছি। নয়তো ওইদিন আমাকে শেষ করে দিতো। মোস্তাফিজ আকন, আফজাল আকন, সোহরাব মোল্লা, নুর ইসলাম মোল্লাসহ আরও কয়েকজনকে নিয়ে বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে সব কিছু লুটপাট করে নিয়ে যায়।
এর মধ্যে রনি বেগম ও সাদ্দাম হোসেন নজির আকনের বিরুদ্ধে আলীপুর সেনা ক্যাম্প এবং থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানিয়েছেন।
শুধু বাড়িঘরে হামলা নয় কুয়াকাটা সৈকতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে নজির আকনের বিরুদ্ধে।
সর্বশেষ ৩ অক্টোবর চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় মারধর করে সৈকতে ঘোড়া চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা সজীব নামে এক যুবককে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ফটোগ্রাফার ও ঘোড়া চালক বলেন, সপ্তাহে সপ্তাহে নজির আকনকে খুশি করার নামে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলেই মারধর, বাড়িঘরে হামলা চালায়।
দুজন হোটেল ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, নজির আকন নিজেও একজন ব্যবসায়ী। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরপরই সে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অনেকের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে, অনেককে মারধর করে এলাকা ছাড়া করেছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে যুবদল নেতা নজির আকন বলেন, সাদ্দাম হোসেন আমার প্রতিবেশী। সাদ্দাম আওয়ামী লীগের কঠোর সমর্থক। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার হয়রানিতে একদিনও বাড়িতে ঘুমাতে পারিনি। ওর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় নেই, এখন সেও আমার মতো বাড়িতে ঘুমাতে পারবে না সেটাইতো স্বাভাবিক। এছাড়া অন্য যে অভিযোগগুলো তোলা হয়েছে সেগুলো মিথ্যা, বানোয়াট। এলাকার মানুষ জানে আমি কেমন মানুষ। আপনাকে আর নতুন করে কি বলব?
কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন সিকদার বলেন, নজিরের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে এ ধরনের অভিযোগ আমাদের কাছে কেউ জানাননি। কেন্দ্রের নির্দেশনা রয়েছে, দলের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি, দখল, ভাঙচুর-লুটপাটের সুযোগ নেই। কেউ এ ধরনের কর্মকাণ্ড করে থাকলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মহিপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, আমি এখানে জয়েন করেছি দুই সপ্তাহ হয়েছে। এমন অভিযোগ আমি পাইনি। পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর