বাগেরহাটে বাজারে কাঁচামরিচের ঝাল যেন ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। তবে সেটি স্বাদে নয়, দামে। কেজি প্রতি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়। সেই সঙ্গে বেড়েছে সবজি, মশলা, মাছ ও চালসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম।

সোমবার (১৩ অক্টোবর) সকালে বাগেরহাট শহরের সব থেকে বড় বাজার ঘুরে দেখা যায়, কেজি প্রতি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়। সপ্তাহখানেক আগেও এর দাম ছিল ১৮০-২২০ টাকা।

এর কারণ উল্লেখ করে বিক্রেতারা বলছেন, ভারী বৃষ্টি ও বন্যার কারণে সরবরাহে ঘাটতি থাকায় বেড়েছে কাঁচামরিচের দাম। সপ্তাহখানেক আগেও বাজারে ১৮০-২২০ টাকা কেজি দরে কাঁচামরিচ কেনা যেত।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, বাজারদর নিয়ন্ত্রণ ও সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে বাজার মনিটরিং টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। আমরা নিয়মিত বাজারে অভিযান চালাচ্ছি। কোথাও অসংগতি ও অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বেড়েছে অন্যান্য সবজির দামও। ৫৫ টাকার আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, ৩০ টাকার মিস্টি কুমড়া পৌঁছেছে ৬০ টাকা, ৪০ টাকার শসা ৬০-৭০ টাকা, করলা ৮০, বেগুনের কোনো গুন না থাকলেও দ্বিগুণ দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। এছাড়া টমেটো ২৬০ টাকা, পেঁপে ৫০, ঢেড়স ৬০, কুশি ৮০, পোটল ৯০ ও কচুর মুখি ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক কথায় ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি আর নেই বাজারে। ব্যবসায়ীরা বলছেন সরবরাহ থাকায় দাম বেড়েছে।

অন্যদিকে মা ইলিশ রক্ষায় সমুদ্রে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাজারে সাগরের মাছের সরবরাহ কমেছে। সেই সুযোগে স্থানীয় উৎপাদিত মাছ বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। রুই, কাতলা, মৃগেল, গ্রাসকার্প, নাইলোটিকা, চায়না পুঁঠি, সিলভারকার্প আকার ভেদে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টেংরা মাছ, হরিণা চিংড়ি, চামি চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। পাঙাস ও তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে  ১২০-২৮০ টাকা পর্যন্ত। চাষের কৈ ২০০-২৫০ টাকা, শোল মাছ ৩০০-৬০০ টাকা, টাকি ২০০-৩০০ টাকা, রুপচাঁদা ৬০০-৭০০ টাকা, দাঁতনে মাছ ২০০-৫০০ টাকা, পুটি মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০-১২০ টাকা, জাবা ২৬০-৩৫০ পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এত বেশি দামে মরিচ কেন বিক্রি হচ্ছে এ প্রশ্নের উত্তরে বিক্রেতা শেখ তলিফ বলেন, কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। কয়েকটি জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে অনেক সবজির বাগান নষ্ট হয়ে গেছে। তাই কাঁচা মরিচসহ সবজির দাম বাড়তি।

বাজার করতে আসা খাদিল হাসান বলেন, ১৫ দিন আগেও কাঁচা মরিচসহ সবজির দাম কিছুটা কম ছিল। চলতি সপ্তাহে দাম অনেক বেড়েছে। ২০০ গ্রাম কাঁচা মরিচ কিনেছি ১৪০ টাকায়। কীভাবে বেছে থাকবো আমরা?

ক্রেতা সালমা আক্তার বলেন, এক সপ্তাহেই মরিচের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের বেঁচে থাকাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে। বর্তমান সরকারের কাছে অকুল আবেদন  যেন এই বিষয়ের দিকে তিনি নজর দেন।

এদিকে চালের দামও কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। বুলেট ও স্বর্না বুলেট প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা ও চিকন চাল জাত ভেদে ৬০ থেকে ৯০ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে স্থানীয় মোটা চাল ও ভোজন চালের।

বাগেরহাট ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, বাজারদর নিয়ন্ত্রণ ও সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে বাজার মনিটরিং টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। আমরা নিয়মিত বাজারে অভিযান চালাচ্ছি। কোথাও অসংগতি ও অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

শেখ আবু তালেব/এফআরএস