দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে চলছে আগাম জাতের আমন ধান কাটা-মাড়াই। কৃষকরা বাড়তি লাভ হিসেবে চাষাবাদ করেছেন স্বল্পমেয়াদি এই আগাম জাতের আমন ধান। এই ধানের কাঁচা খড় গো খাদ্য হিসেবে বিক্রি করে খরচ ওঠাচ্ছে কৃষকরা। অপরদিকে এর মাধ্যমে কম খরচেই গো খাদ্যের চাহিদা মিটাতে পারছেন খামারিরা।

দেখা গেছে, ফুলবাড়ী পৌর শহরের কলেজ রোড, উপজেলা রোড, নিমতলা মোড়সহ বেশ কিছু এলাকায় সড়কের পাশে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে আগাম ধানের কাচা খড়। সেখান থেকে স্বল্প মূল্যে খড় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন খামারিসহ ঘরে ছোট পরিসরে গরু পালনকারীরা। এতে করে কৃষকরাও মাঠের খড় বিক্রি করে তাদের চাষের খরচ তুলতে পারছেন। বাজারে ধানের দামের সঙ্গে খড়ের উচ্চমূল্য পেয়ে বাড়তি আয়ের মুখ দেখছেন ক্ষুদ্র-প্রান্তিক কৃষকরা। পাশাপাশি আলুসহ অন্যান্য রবি ফসল চাষেরও খরচ কিছুটা এগিয়ে নিতে পারছেন তারা।

এদিকে আগাম জাতের এই ধান কাটা-মাড়াই শেষে সেসব কাচা খড় সংগ্রহ করে কাঁচা খড়ের রমরমা ব্যবসাও করছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। চাহিদা থাকায় মাঠে মাঠে ধানের কাঁচা খড় কেনার জন্য মৌসুমি খড় ব্যবসায়ীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। ধান কাটা-মাড়াই শেষে তারা খড় কিনে এনে বাজারে বিক্রি করে ভালো লাভবান হচ্ছেন।

খামারিরা বলছেন, বর্তমানে এক পোন (৮০টি খড়ের আঁটি) শুকনা খড়ের আঁটি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ হিসাব অনুযায়ী প্রতি আটির দাম পড়ে ১০ টাকা। এদিকে ২০ আঁটি (এক বোঝা) কাঁচা খড় ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে প্রতি পিছ কাচা খড়ের আটির দাম পড়ছে ৩ টাকা। তাই স্বল্প মূল্যে আগাম ধানের কাচা খড় কিনে গরুকে খাওয়ানোয় অনেকটাই খরচ বাঁচাচ্ছেন খামারিরা।

তবে প্রাণী চিকিৎসকরা বলছেন, গরুকে কাঁচা খড় খাওয়ানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এতে করে গরুর নানা সমস্যাসহ মৃত্যুও হতে পারে।

শিবনগর ইউনিয়নের কৃষক মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ধানের পর আগাম আলু চাষ করলে তার দামও ভালো পাওয়া যায়। ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ জমিগুলোতে আগাম জাতের আমন ধান লাগিয়েছিলাম। ধান কাটা ও মাড়াই শেষে কাচা খড়গুলো বিক্রি করছি। এতে করে আমরা লাভবান হচ্ছি। এসব জমিতে এখন আগাম আলু রোপণ করবো।

মৌসুমি কাঁচা খড় ব্যবসায়ী আজগর আলী বলেন, অন্য সময় রিকশা ভ্যান চালাতাম। বর্তমানে আগাম আমন ধান কাটা ও মাড়াই চলছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব কাঁচা খড় কিনে এনে বিক্রি করছি। এর চাহিদাও বেশ ভালো। ২০টি খড়ের ছোট আঁটি একত্রে করে একটি বোঝা ৬০ টাকায় বিক্রি করছি। খামারিরা খরচ বাঁচাতে এসব কাচা খড় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে ২ হাজার খড়ের আঁটি বিক্রি হয়।

খড় কিনতে আসা আরিফুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা জানান, তার খামারে ১০টি গরু আছে। এ জন্য প্রতিদিন তার অনেকগুলো খড় প্রয়োজন হয়। বর্তমানে শুকনা খড়ের যে দাম তাতে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না তিনি। এ জন্য তিনিও ৪ বোঝা কাচা খড় কিনেছেন।

আরেক ক্রেতা শাহিনুর ইসলাম জানান, বর্তমানে শুকনা খড়ের দাম বেশি। তাই খরচ কমাতে তিনি কাঁচা খড় কিনছেন। ৬০ টাকা দরে দুই বোঝা করে খড় কিনেছেন তিনি।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলায় ২ হাজার ৬৯৫ হেক্টর জমিতে ৯ হাজার ৩২৫ টন আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার হাইব্রিড ও উপশি জাতের তেজগোল্ড, ব্রি-৯০, বিনা-১৭, সম্পাকাটারি, জাঁপাড়ি, ধানিগোল্ডসহ আরও বিভিন্ন জাতের আগাম জাতের ধান চাষ হয়েছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রবিউল ইসলাম বলেন, ধানের রোগ বালাই ও পোকা দমনে বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, যা গরুর জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এতে করে পেট ফোলাসহ গরুর বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। সে কারণে গরুকে কাঁচা খড় খাওয়ানো যাবে না, শুখিয়ে খাওয়াতে হবে। তবে কীটনাশক বিহীন কাঁচা ঘাস গরুর জন্য পুষ্টি সমৃদ্ধ।

সোহাগ/এফআরএস