শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষ্যে ৪ দিনের ছুটিতে হোটেল-মোটেলগুলোতে যখন পর্যটক বরণে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা ছিল তখন রাঙামাটির পর্যটন ব্যবসায়ীরা দিন পার করেছেন হতাশায়।

‘অনিবার্য’ কারণ দেখিয়ে ৮ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত রাঙামাটিতে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞায় এ খাতে বড় রকমের ধস নেমেছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। বর্তমানে হতাশা ও দুঃশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন রাঙামাটির হোটেল-মোটেলসহ এই শিল্পে সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।

গত তিন মাস ধরে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সম্প্রতি পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতের কারণে পর্যটকরা কম পাহাড়মুখী হচ্ছেন। এরই মাঝে নিরাপত্তার কারণে প্রশাসনের পর্যটক ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞায় হতাশ ব্যবসায়ীরা যেন অস্থির হয়ে পড়েছেন। তারা দ্রুত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চান।

রাঙামাটি হাউজ বোট ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি বাপ্পী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, রাঙামাটিতে পর্যটক ভ্রমণের এই নিরুৎসাহিতকরণে আমরা একটি বিরাট অর্থনৈতিক চাপের মুখোমুখি হয়েছি। দুর্গাপূজার ছুটিকে কেন্দ্র করে ১১ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত আমাদের হোটেল-মোটেল, হাউজবোটগুলোর যে বুকিং ছিল, সেই বুকিংয়ের টাকাগুলো আমাদের ফেরত দিতে হয়েছে। এটা যদি ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বলবৎ থাকে তাহলে আমরা কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হব।

রাঙামাটি ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস গাইডের সিইও বনকুমুস বড়–য়া বাপ্পী বলেন, অগ্রিম যে বুকিংগুলো ছিল সেগুলোর টাকা আমাদের ফেরত দিয়ে দিয়েছি। প্রশাসনের এই ঘোষণা রাঙামাটির পর্যটন শিল্পের জন্য হুমকি স্বরূপ হয়েছে।

রাঙামাটি ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব রাঙামাটির (টোয়ার) প্রেসিডেন্ট বাদশা ফয়সাল বলেন, অর্থনৈতিক প্রভাবের পাশাপাশি এই নিষেধাজ্ঞার একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পর্যটকদের মনোভাবের ওপর পড়বে। এদিকে নতুন যে উদ্যেক্তারা এই খাতে আসতে চায়, তারা আর এই খাতে আসতে চাইবে না।

গত তিন মাস ধরে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সম্প্রতি পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতের কারণে পর্যটকরা এমনিতেই পাহাড়বিমুখ ছিলেন। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সামনের টানা ছুটিতে যখন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নিচ্ছিল হঠাৎ করেই এ নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন এই খাতে জড়িত ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।

রাঙামাটি ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমিতির সহ-সভাপতি রমজান আলী বলেন, আমাদের প্রায় ১ হাজার মালিক-শ্রমিক এই সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে। আমরা ভেবেছিলাম দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে পর্যটক সমাগম হবে এবং ভালো ব্যবসার আশা করেছিলাম। কিন্তু আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই প্রশাসন এমন একটি সিদ্ধান্ত নেওয়াতে আমরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হলাম।

রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, ট্যুরিস্ট আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সে দৈনিক লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হচ্ছে। তবে আমি আশা রাখছি শীঘ্রই এই নিষেধাজ্ঞা কেটে যাবে।

রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি আলী বাবর বলেন, রাঙামাটি পর্যটন নগরী হওয়াতে এখানের অনেক মানুষ পর্যটকদের ওপর নির্ভর করেই জীবিকা নির্বাহ করে। পর্যটকদের রাঙামাটি ভ্রমণে যে নিষেধাজ্ঞা চলমান রয়েছে এতে প্রতিদিন হোটেল-মোটেল খাতে এক লাখ এবং অন্যান্য খাতে প্রায় ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এই নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকলে রাঙামাটির পর্যটন শিল্প একেবারেই ভেঙে পড়বে। রাঙামাটির পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের এই ক্ষতি থেকে উত্তরণের জন্য অতি দ্রুত এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা জরুরি।

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, পর্যটকদের রাঙামাটি ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার বিষয়টি সরকারি সিদ্ধান্ত। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটকদের ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এই ব্যাপারে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

মিশু মল্লিক/আরকে