বিকল্প সেতুতে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার
ছোট যমুনা নদীর ওপর নির্মাণ করা হবে প্রায় ৯০ মিটার দীর্ঘ গার্ডার সেতু। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভেঙে ফেলা হয়েছে পুরোনো সেতুটি। মানুষ ও ছোট ছোট যানবাহন চলাচলের জন্য করে দেওয়া হয়েছে বিকল্প সেতু। কাঠের পাটাতন আর গাছের গুড়ি দিয়ে করা এই বিকল্প সেতুর মাঝখানের পাটাতন বেঁকে গেছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বিকল্প সেতুটিও। তবে উপায় না পেয়ে ঝুঁকি নিয়ে সেতুটি পারাপার হতে হচ্ছে।
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার বড় মানিক এলাকায় এই সেতুর অবস্থান। ঝুঁকি এড়াতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মাইকিং করে কাঠের সেতু দিয়ে রিকশা-ভ্যান চলাচল নিষেধ করে হেঁটে চলাচলের জন্য বলা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
পাঁচবিবির স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রোগ্রাম ফর সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজেস কর্মসূচির আওতায় পাঁচবিবি উপজেলার বড় মানিক এলাকায় ছোট যমুনা নদীর ওপর ৯০ দশমিক ৬ মিটার দীর্ঘ গার্ডার সেতু নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০২৪ সালের ১৫ জানুয়ারি সেতুটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২৫ সালের ৮ জুলাই কাজের মেয়াদ শেষ হবে। এ কাজের চুক্তি মূল্যে ৮ কোটি ৫৭ লাখ ১১ হাজার ৭৫২ টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজটি পেয়েছেন আইসিএল প্রাইভেট লিমিটেড ও এমডি সোহেল জেভি। তবে জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের নেতা এইএম মাসুদ রেজা কাজটি করছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে গত ৫ আগস্টের পর মাসুদ রেজা সেতু এলাকায় আসছেন না। তবে তার লোকজন কাজ দেখভাল করছেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে সেতুটির দেখভাল করছেন জয়পুরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য নুর ইসলাম মাহমুদ পলাশ। তিনি বলেন, হঠাৎ নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের গাছের গুড়ি ভেসে এসে কাঠের ব্রিজে ধাক্কা লাগে। এ কারণে এটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এটি দেখার পর থেকেই আমরা মেরামতের জন্য লোক দিয়েছি। সংস্কার কাজ এখনও চলছে। আর সব সময় এখানে জনসাধারণকে হেঁটে চলাচল করতে মাইকিং করা হচ্ছে। ভারি যানবাহন নিয়ে চলাচল করতে নিষেধ করা হচ্ছে। সংস্কার কাজ শেষ হলে ভারি যানবাহন করতে পারবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নতুন সেতু নির্মাণের জন্য পুরোনো সেতু ভেঙে ফেলা হয়েছে। আর দুই পাশের মানুষ ও ছোট ছোট যানবাহন চলাচলের জন্য গাছের গুড়ির খুঁটি দিয়ে দুই লেনের কাঠের বিকল্প সেতু করে দেওয়া হয়েছে। নদীর পানির স্রোত রয়েছে। বিকল্প সেতুর মাঝখানে বেঁকে নিচে দেবে গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে মাইকিং করে কাঠের সেতু পারাপারে নিষেধ করা হচ্ছে। হেঁটে চলাচলের জন্য বলা হচ্ছে। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা-ভ্যানের চালকেরা কাঠের সেতুর দুই পাশে যাত্রীদের নামিয়ে কাঠের সেতু পারাপার হচ্ছে। আর ঠিকাদারের লোকজনেরা ক্ষতিগ্রস্ত কাঠের বিকল্প সেতু মেরামতের কাজ করছিলেন।
ব্যাটারিচালিত আটোচালক সাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা এই গাড়ি চালিয়ে রোজগার করে সংসার চালাই। সেতুর এই সমস্যার কারণে দূর-দূরান্ত দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। দূর দিয়ে গেলে ব্যাটারির সাশ্রয় হচ্ছে না। কাঠের সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এক পাশে এসে যাত্রী নামিয়ে পার হয়ে তাদের নিতে হচ্ছে। বিকল্প কাঠের সেতুর অবস্থা অনেক খারাপ। যে কোনো সময় ভেঙে পড়ে বিপদ হতে পারে।
বিকল্প সেতুতে হেঁটে পার হচ্ছিলেন কয়েকজন নারী। তারা বলেন, প্রথম দিকে মোটরসাইকেল বা ভ্যানে চড়েই পারাপার হওয়া যেত। কিন্তু এখন নামতে হচ্ছে। হেঁটে ব্রিজ পার হওয়ার পর আবার গাড়িতে চলতে হচ্ছে। হেঁটে পার হওয়ার সময়ও অনেক ভয় লাগে। যে কোনো সময় একটা ঘটনা ঘটতে পারে।
রহমত আলী নামের এক গরু ব্যবসায়ী বলেন, কাঠের সেতুর যে অবস্থা তা দিয়ে হেঁটে যেতেও তো ভয় লাগে। কিন্তু এখন কিছু করার নেই। দূর দিয়ে গেলে অনেকদূর ঘুরতে হবে। এজন্য ভেতরে ভেতরে ভয় লাগলেও এই পথ দিয়ে যেতে হচ্ছে।
ওই পথ দিয়ে চলাচলকারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাটারিচালিত ভ্যানচালক বলেন, নতুন সেতু হচ্ছে। এটির কাজ আওয়ামী লীগ নেতা প্রভাষক মাসুদ রেজা করছেন। তখন তিনি দলীয় ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের প্রভাব খাটিয়ে যেনতেনভাবে কাঠের একটি বিকল্প সেতু করে দিয়েছেন। এখন সেতু বেঁকে গেছে। যাত্রী তো দূরের কথা, খালি গাড়ি নিয়ে যেতেও ভয় লাগছে।
পাঁচবিবি উপজেলা প্রকৌশলীর অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সদরের উপজেলা প্রকৌশলী সামিন শারার ফুয়াদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক বৃষ্টি ও উজান থেকে নদীতে পানি নেমে আসার কারণে বিকল্প সেতুটি ক্ষতির মুখে পড়েছে। সেখানে বেইলি সেতুর অনুমোদন নেই। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ওই স্থান পরিদর্শন করেছেন। বিকল্প সেতুর জন্য মানুষের কষ্ট হচ্ছে। বেইলি সেতুর জন্য ঊর্ধ্বতনের কাছে চিঠি লিখেছি। সেটি সময় সাপেক্ষ হলেও নদীর পানি কমে গেল আমরা সেখানে আরেকটি বিকল্প ব্যবস্থা করবো।
আরএআর