ফেনীতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে টমটম চালক জাফর আহাম্মদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেদ্দা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হাজী রহিম উল্লাহকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রোববার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে ফেনী সদর আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাতেমা তুজ জোহরা মুনা এ আদেশ দেন। 

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। আগামীকাল এ মামলায় তার রিমান্ড চাওয়া হবে।

এর আগে গতকাল শনিবার হাজী রহিম উল্লাহকে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৩ আগস্ট শহরের ট্রাংক রোডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে টমটম চালক জাফর আহাম্মদ স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করেন। আন্দোলনে তার অংশগ্রহণের বেশ কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইনে প্রকাশ হয়। ওইদিন শর্শদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানে আলম ভূঁইয়াসহ আরও ১০-১১ জন আসামি জাফরের বাড়িতে গিয়ে হত্যার হুমকি দেন। ভয়ে স্ত্রী আছিয়া স্বামীকে সেদিন বাসায় আসতে নিষেধ করেন। জাফরও তার স্ত্রীর কথা মতো সেদিন আর বাসায় যায়নি। পরদিন ৪ আগস্ট দুপুরের দিকে জাফরকে ফেনী শহরের পুরাতন জেল রোডস্থ জেলা কারাগারের সামনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। খবর পেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তা থেকে উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় গত ৫ সেপ্টেম্বর নিহত জাফরের স্ত্রী আছিয়া বেগম বাদী হয়ে ২০৫ জনের নাম উল্লেখ ও আরও ১০০-১০৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ফেনী মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ফেনী-৩ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। 

ফেনী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্ম সিংহ ত্রিপুরা বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য হাজী রহিম উল্লাহকে টমটম চালক জাফর হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, হাজী রহিম উল্লাহ ২১ বছর সৌদি আরবের জেদ্দা প্রবাসী শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ফেনী-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট কারচুপি, এজেন্টদের বের করে দেওয়া ও ভোটকেন্দ্রে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে ফলাফল ঘোষণার আগ মুহূর্তে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি।

তারেক চৌধুরী/আরএআর