শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে চারিদিকে নাড়ু-মুড়ি মুরকি-মোয়ার সুঘ্রাণ, নানা উপকরণে তৈরি ঐতিহ্যবাহী নাড়ু এখন রেডিমেড প্যাকেটে। আর এসবের বেচাকেনা ও চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী।

আবহমান বাংলার শরৎকাল আর দুর্গাপূজা ঘিরে মুড়ি মুরকি ও নাড়ুর আত্মীয়তা বড় নিবিড়। কিন্তু মানুষের গতিময় জীবন আর ব্যস্ততায় হারাতে বসেছে বাড়িতে হাতে তৈরি নাড়ু-মোয়ার ঐতিহ্য। এখন বাজার দখল করেছে ‘রেডিমেড নাড়ু’। নানা উপকরণে তৈরি নাড়ু এখন মেলে প্যাকেটে।

শনিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে নাটোর শহরের মুড়িপট্টি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দোকানে থরে থরে সাজানো নারিকেলের নাড়ু, তিলের নাড়ু, ঝুড়ির নাড়ুসহ বিভিন্ন প্রকারের নাড়ু মোয়া আর মুড়ি মুরকি। আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে এসব নাড়ু মোয়ার চাহিদাও বেশি। বেচাকেনাও চলছে দেদারসে। শুধু হিন্দু নয়, হিন্দু-মুসলিম জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই কিনছেন এইসব সুস্বাদু খাবার। বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে বলে জানান দোকানিরা।

নাড়ু-মোয়া কিনতে এসে গৌতম দত্ত নামে এক ক্রেতা বলেন, বাড়িতে সকলের অনেক ব্যস্ততা। ফলে এ বছর নাড়ু বানাতে পারেনি। কিন্তু পূজায় নাড়ু না খেলে কি হয়। তাই এখানে এসে নারকেল ও তিলের নাড়ু ক্রয় করলাম। দাম একটু বেশি হলেও সময়মতো পাওয়ায় ভালো লাগছে।

বুলবুল আহমেদ নামে আরেক ক্রেতা বলেন, নারকেলের নাড়ু আমার খুব পছন্দের। এখানে এসে দেখি প্যাকেটজাত করে বিক্রি হচ্ছে। ৫০০ গ্রামের একটি প্যাকেট কিনেছি ৪০০ টাকা দিয়ে।

শহরের মুড়িপট্টি এলাকার বিক্রেতা নয়ন পাল বলেন, নাড়ু, মুড়ি মুরকি, মোয়া সকলের প্রিয় খাবার। কিন্তু এগুলো তৈরি করা খুব ঝামেলার মনে করে বাড়িতে অনেকেই তৈরি করেন না। যার ফলে মুখরোচক এই খাবারের আলাদা বাজার তৈরি হয়েছে। অনেকেই এখন বাজারে কিনতে পাওয়া যায় এমন নাড়ু-মোয়া কিনেছেন। ভালো চাহিদা থাকায় বিক্রিও হচ্ছে অনেক।

এ বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মী দেবাশীষ কুমার সরকার বলেন, ঘরে-ঘরে গুড় জাল দেওয়া, মা-কাকিমাদের এক সঙ্গে বসে নারকেল কোড়ার দৃশ্য এখন খুবই কমই খুঁজে পাওয়া যায়। দাদি-নানি কিংবা মা-কাকিমারা এখন এসব বানানোর গল্প বলেন। গ্রামাঞ্চলে এসব ঐতিহ্য কিছু চালু থাকলেও শহরাঞ্চল থেকে আজ প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।

এর কারণ হচ্ছে দিন দিন মানুষ যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। পরিবারগুলো ভেঙে ছোট হয়ে যাচ্ছে। তবে আমাদের চাওয়া দোকানে কিনে হলেও এ ঐতিহ্য বেঁচে থাকুক চিরকাল।

জেলার সচেতন নাগরিকরা বলছেন, বাণিজ্যিকভাবে তৈরি এসব নাড়ু-মোয়া যাতে নিম্নমানের না হয়ে যায়, সেইদিকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরদারি রাখতে হবে। তা না হলে একটা সময় আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী এসব খাবার সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের বিরূপ ধারণা তৈরি হতে পারে। যারা এগুলো তৈরি করছেন, তারা যাতে খাবারের মান নিশ্চিত করে বাজারে ছাড়েন।

গোলাম রাব্বানী/এএমকে