নীলফামারীর সৈয়দপুরের সাকিব মাহমুদুল্লাহর স্বপ্ন ছিল বড় ক্রিকেটার হওয়ার। আশা ছিল বাংলাদেশ জাতীয় দলের একজন খেলোয়াড় হওয়ার। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া ছররা গুলির আঘাতে একটি চোখের আলো হারিয়েছে সাকিব, আরেকটি চোখও নষ্ট হওয়ার পথে। 

চোখের আলো চলে যাওয়ায় সাকিবের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। এখন সরকারি সহায়তায় হলেও চোখের আলোটুকু ফিরে পেতে চান তিনি।

রংপুর কারমাইকেল কলেজের অনার্স ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র সাকিব মাহমুদুল্লাহর বাড়ি সৈয়দপুর পৌর শহরের কাজীপাড়া মহল্লায়। তার বাবা আকবর আলী ছিলেন একজন মাংস ব্যবসায়ী এবং মা আছিয়া খাতুন গৃহিণী। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট সাকিব।

ছোটবেলা থেকে তার ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছা ছিল। তাই লেখাপড়ার পাশাপাশি নিয়মিত ক্রিকেট অনুশীলন করতেন সাকিব। বিভিন্ন মাঠে ক্রিকেটের আসরে সুনামও কুড়িয়েছেন। এজন্য বিভিন্ন ক্রিকেট টিম থেকে ডাক পড়ত সাকিবের। এভাবে কিছু আয়-রোজগার শুরু হয় তার। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের ছররা গুলির আঘাতে এলোমেলো হয়ে যায় সাকিবের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন।
 
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন সাকিব। গত ১৮ জুলাই সৈয়দপুরে বন্ধুদের সঙ্গে মিছিলে গিয়েছিলেন তিনি। এ সময় মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে তার দুই চোখে গুলি লাগে। বন্ধুরা তাকে উদ্ধার করে সৈয়দপুর ১০০ শয্যার হাসপাতালে ভর্তি করায়। পরে ঢাকার বেসরকারি চক্ষু হাসপাতাল ও সিএমএইচে চিকিৎসা নেন তিনি। কিন্তু বাঁ চোখে আলো আর ফিরে আসেনি। এখন ডান চোখেও পরিষ্কার দেখতে পান না। ডান চোখও এখন নষ্ট হওয়ার পথে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে বিজয় হয়েছে ছাত্র-জনতার। দেশের আপামর মানুষ সে আন্দোলনের সুফল পেতে শুরু করেছে। কিন্তু দিন দিন অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে সাকিবের পৃথিবী।

সাকিব মাহমুদুল্লাহ বলেন, আমার বাবা আমাকে ক্রিকেটার হিসেবে তৈরি করতে চেয়েছিল। এজন্য নাম রেখেছিল সাকিব মাহমুদুল্লাহ।ছোটবেলা থেকে আমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে শহর-গ্রামের বিভিন্ন ক্রিকেটের মাঠ। খেলার মাঠে খানিকটা পোক্ত হতেই ২০১৭ সালে বাবা মারা যায়। কিন্তু আমার স্বপ্ন থেমে থাকেনি। বাবার দেখানো পথে এলাকার বিভিন্ন মাঠে খেলে ক্রিকেটের আসরে অনেক সুনাম কুড়িয়েছি। এরপর দূর-দূরান্তের বিভিন্ন মাঠে ডাক পড়তে শুরু করে। এভাবে আয়ও হতে শুরু করে। খেলার আয়েই চলতো লেখাপড়ার খরচ। কিন্তু আন্দোলনে পুলিশের গুলি শেষ করে দিয়েছে আমার স্বপ্ন। গুলির আঘাতে আহত হয়ে বাম চোখের আলো হারিয়েছি। ডান চোখও এখন নষ্ট হওয়ার পথে।  

তিনি ঢাকা পোস্টকে আরও বলেন, বাবার মৃত্যুর পর বড় দুই ভাই সংসারের হাল ধরেছে। তারাও পেশায় মাংস ব্যবসায়ী। জেলা ক্রিকেট দলে প্রথম বিভাগে বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে খেলতাম। এখন চোখের আলো নিভে যাওয়ার সাথে সাথে অর্থাভাবে শিক্ষাজীবনও থেমে যাবে হয়তো। চিকিৎসকরা বলেছেন দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। দেশের বাইরে নিয়ে গেলে চোখ বাঁচানো যেতে পারে। এজন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। চোখের আলো ফিরে পেতে সরকারসহ দেশের মানুষের সহযোগিতা কামনা করছি। আমি যাতে মাঠে ফিরতে পারি এটাই আমার চাওয়া সরকারের কাছে।

সৈয়দপুর উপজেলার সাবেক ক্রিকেটার মোক্তার সিদ্দিকী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছোটবেলা থেকে সাকিব আমার কাছে মাঠে অনুশীলন করে। সে আমার সিটি ক্রিকেট ক্লাবের নিয়মিত একজন খেলোয়াড়। এখন তাকে মাঠে ফেরাতে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। পরিবারের পক্ষে সে ভার বহন করা সম্ভব নয়। আমি সাকিবের চোখের আলো ফিরিয়ে দিতে সরকার ও প্রশাসনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
 
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নূর-ই-আলম সিদ্দিকী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের তালিকা হাসপাতাল থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। নীলফামারী জেলা থেকেও একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে আমাদের কাছে এখনো কোনো দিক নির্দেশনা আসেনি। তবে সাকিবের পরিবারের পক্ষ থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্রসহ যোগাযোগ করা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শরিফুল ইসলাম/আরকে