পিরোজপুর সদরের কদমতলা এলাকায় প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে আটজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একই পরিবারের চারজনের বাড়ি নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের হোগলাবুনিয়া গ্রামে। 

বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দিবাগত রাতে এশার নামাজের পরে জানাজা শেষে সাড়ে ৯টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে একসঙ্গে চারজনকে পাশাপাশি দাফন করা হয়।

এর আগে সন্ধ্যায় চারজনের মরদেহ হোগলাবুনিয়া গ্রামের মৃধা বাড়িতে পৌঁছালে শোকের ছায়া নেমে আসে ওই বাড়িতে। মরদেহ দেখে বাবা, মা আর ভাইসহ আশপাশের মানুষ কাঁদতে শুরু করেন। শেষবারের মতো একনজর দেখতে আশপাশের অসংখ্য মানুষকে ওই বাড়িতে ভিড় করতে দেখা গেছে।

এ ঘটনায় অপর আরেক পরিবারের চারজনের বাড়ি শেরপুরের সদর উপজেলার ভীমগঞ্জ গ্রামে।

এদিকে এই দুর্ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়েছে।

এর আগে বুধবার দিবাগত রাত সোয়া ২টায় সদর উপজেলার নাজিরপুর সড়কের নূরানী গেট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুই পরিবার মিলে কুয়াকাটায় ঘুরতে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।

নিহতরা হলেন—নাজিরপুরের হোগলাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. শাওন (৩২), তার স্ত্রী আমেনা বেগম (২৫), শাওনের দুই ছেলে শাহাদাত (১০) ও আব্দুল্লাহ (৩)। শাওন দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িটির চালক ছিলেন।

এ ছাড়া আরেক পরিবারের নিহতরা হলেন—মোতালেব (৪৫), তার স্ত্রী সাবিনা (৩৬), তাদের কন্যাসন্তান মুক্তা (১০) ও ছেলে শোয়াইব (২)। তাদের বাড়ি শেরপুরের সদর উপজেলার ভীমগঞ্জ গ্রামে।

নিহত শাওনসহ পরিবারের চারজনের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছানোর পর বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন শাওনের মা মাহিনুর বেগম। এই পরিবারের ছোট সন্তান শাওনসহ শাওনের দুই ছেলে ও স্ত্রীকে হারিয়ে বারবার কেঁদে উঠছেন তিনি।

নিহত শাওনের শাশুড়ি জাকিয়া বেগমও মরদেহ দেখে মূর্ছা যাচ্ছিলেন বারবার। কান্নাজড়িত কণ্ঠে জাকিয়া বেগম বলেন, আমার তো সব শেষ হয়ে গেল। হায় আমার মেয়ে, জামাই আর নাতিরা সব একসঙ্গে চলে গেল।

নিহত শাও‌নের মামাতো বোন রিমা আক্তার বলেন, শাওন ভাই আমাকে ফোন করে কুয়াকাটা থেকে আমাদের বাড়িতে আসার কথা বলে। তখন তার সঙ্গে ভাবি ও ভাইয়ার বন্ধুসহ আটজনের খাবার রান্না করার কথা বলে। আমরা খাবার রান্না করে রাত আড়াইটা পর্যন্ত অপেক্ষা করি। ভাই আর আসে না। এখন আসছে সবাই মরদেহ হয়ে।

নিহত শাওনের বড় ভাই জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা তিন ভাই এক বোন। শাওন আমাদের সবার ছোট, সে আর্মিদের সিভিল বিভাগের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে (সিএইচডি) কাজ করতেন। দুই সন্তান নিয়ে আমার ভাই সুখে-শান্তিতে ছিল। একটি সড়ক দুর্ঘটনা সব শেষ করে দিয়েছে। রাত সাড়ে ৯টায় পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে আসেন দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীর ছেলে শামীম সাইদী। তিনি বলেন, অত্যন্ত মর্মান্তিক একটি ঘটনা। দুটি পরিবারের তাজা আটটি প্রাণ একই সড়ক দুর্ঘটনায় চলে গেলো। আমাদের সকলেরই সতর্ক হওয়া উচিত যিনি চালক আর যিনি যাত্রী সকলকেই সচেতন হতে হবে। আমি শোকাহত পরিবারকে সমবেদনা জানাচ্ছি।

পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপারেশনস) মো. মুকিত হাসান খাঁন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পিরোজপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পরিবারের আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত করে কি কারণে এ দুর্ঘটনা হয়েছে তা বিস্তারিত জানা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে চালকের অসতর্কতার, কিংবা ঘুমিয়ে পড়ার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মো. মঞ্জুর মোর্শেদ আলম বলেন, নিহতদের দাফনের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে নিহত শাওনের পরিবারকে ৩০ হাজার এবং মোতালেবের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের একটি গাড়িতে মোতালেবের পরিবারের সদস্যদের মরদেহ শেরপুরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বুধবার দিবাগত রাত সোয়া ২টার দিকে পিরোজপুর সদর উপজেলার নাজিরপুর সড়কের নূরানী গেট এলাকায় দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে খালে পড়ে যায় প্রাইভেটকারটি। রাত সোয়া ২টায় খালে গাড়ি পড়ে যাওয়ার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এরপর পিরোজপুর ফায়ার স্টেশনের একটি ইউনিট রাত আড়াইটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যে আরও একটি ইউনিট সেখানে গিয়ে যুক্ত হয়। একে একে গাড়িতে থাকা মোট আটটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

শাফিউল মিল্লাত/এএমকে