ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ২২ দিন বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ এলাকায় সকল প্রকার মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। মূলত জাটকাকে ইলিশে পরিণত হতে এই নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগেই ঝাঁকে ঝাঁকে জাটকা শিকার করছেন জেলেরা। দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রগুলোতে মান সাইজের ইলিশের চেয়ে জাটকায় সয়লাব। এতে মৎস্য সম্পদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) বরিশাল জেলা পাইকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌ ও সড়কপথে মাছ নিয়ে আসা হচ্ছে। এসব মাছের দুই-তৃতীয়াংশই জাটকা বা ১০ ইঞ্চির কম সাইজের ইলিশ।

আড়তদার বাদশা ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ৫/৬ দিন ধরে জাটকায় পুরো মার্কেট ভরে গেছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারছেন না। কেউ কেউ গেলেও বেশি দিন থাকতে পারছেন না। এখন বাজারে যে মাছ আসছে তার সবই নদীর। পোর্ট রোডে ১০০ মণ মাছ এলে তার মধ্যে ৯০ মণই জাটকা। জাটকাগুলো বড় হতে না দিলে আগামী মৌসুমে ইলিশের সংকট দেখা দিতে পারে।

আরেক ব্যবসায়ী কবির হোসেন বলেন, বড় মাছ না আসায় জাটকা মাছই চলছে। ৫০০-৬০০ টাকা কেজিতে মানুষ কিনছে। এখন হয়ত জাটকা কিনছে কিন্তু ঝাঁকে ঝাঁকে জাটকা ধরে ফেলায় অপূরণীয় ক্ষতি হবে আমাদের। সামনের মৌসুমে ইলিশ থাকবে না নদীতে।

আরেক ব্যবসায়ী সেলিম হাওলাদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, জাটকাগুলোই ইলিশ মাছ হবে। জেলেরা আমাদের জানিয়েছে নদীতে জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে জাটকা উঠে আসছে। ধারণা করা হচ্ছে, সরকার যে সময়টাকে ডিম ছাড়ার বলে জানতো তার আগেই এ বছর ডিম ছেড়ে দেওয়ায় এত জাটকা পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এবারের অভিযানে জাটকা সংরক্ষণ শুরু হওয়ার আগেই জেলেরা সব জাটকা নদী থেকে তুলে ফেলছে। মাছ বড় হতে না দিলে ক্রেতা-বিক্রেতা সকলের জন্যই খারাপ।

সাগর আকন নামের এক ক্রেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাজারে এসে দেখছি সব দোকানেই জাটকা। জাটকাগুলো যদি না মারা হত ভবিষ্যতে আমরা বড় ইলিশ খেতে পারতাম। আমি মনে করি ইলিশ বিজ্ঞানীদের আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত। প্রতিবছর তো ইলিশ একই সময়ে ডিম ছাড়বে না। পরিবেশ, আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে ডিম ছাড়ার সময় শনাক্ত করা উচিত।

হিজলা উপজেলার কুচাইপট্টি ইউনিয়নের জেলে মহম্মদ আলী বলেন, নদীতে এখন সকলেই কারেন্ট জাল ব্যবহার করে। কারেন্ট জাল হচ্ছে ঘন জাল। এতে ছোট থেকে বড় সব মাছ আটকে পড়ে। প্রশাসন যদি অভিযান চালিয়ে ঘন জালগুলো নদী থেকে তুলে ফেলত তাহলে জাটকা মারা পড়ত না। এ বছর যে সংখ্যায় জাটকা ধরা পড়ছে তাতে আগামীবার ইলিশের জন্য হাহাকার করতে হবে।

বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বছর বড় মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। জেলেরা মৌসুমের প্রয়োজন মেটাতে এখন বড়-ছোট সব মাছ ধরে ফেলছে। এর খারাপ প্রভাব অবশ্যই পড়বে।

জাটকা না থাকলে বড় মাছ আসবে কোথা থেকে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যে জানিয়েছি যেন নির্ধারিত সময় নয় জাটকা আহরণ বন্ধে সারা বছরই অভিযান প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে মোট ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে ৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৪২ মেট্রিক টন। এরমধ্যে বরিশাল বিভাগে উৎপাদিত হয়েছে ৩ লাখ ৭২ হাজার ৩৪৩ মেট্রিক টন, যা মোট উৎপাদনের ৬৫ শতাংশেরও বেশি।

এমজেইউ