নোয়াখালীর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে হঠাৎ করে নতুন পাসপোর্ট করার হিড়িক পড়েছে। বিগত দিনের তুলনায় পাসপোর্ট অফিসে সবচেয়ে বেশি মানুষ পাসপোর্ট করতে আসছেন। প্রতিদিন ছয় থেকে সাত শতাধিক মানুষ আসছেন পাসপোর্ট করতে।

এর আগে, একসঙ্গে এত মানুষের ভিড় পাসপোর্ট অফিসে কখনোই দেখা যায়নি। অতিরিক্ত গ্রাহকের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে পাসপোর্ট অফিস কর্তৃপক্ষ। তবে, পুলিশি ভেরিফিকেশনে স্বস্তি মিলছে বলে জানিয়েছেন অনেকেই। সেই সঙ্গে নেই দালালের দৌরাত্ম্য।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পাসপোর্ট অফিসের সামনে এবং সামনের রাস্তায় অস্বাভাবিক ভিড় দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন বয়সী গ্রাহক দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন পাসপোর্ট করার জন্য। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক সপ্তাহ পর থেকে অতিরিক্ত গ্রাহকের কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তপক্ষের। এছাড়া পাসপোর্ট অফিসে জনবল কম থাকার কারণেও কিছুটা ভোগান্তি বাড়ছে।

জানা গেছে, নতুন পাসপোর্ট কিংবা নবায়নে নতুন করে ডাটা এন্ট্রি করা হচ্ছে। ই-পাসপোর্টের জন্য চোখের আইরিশসহ ছবি তোলা হচ্ছে নতুন করে। প্রতিটি কাজে গড়ে পাঁচ থেকে ১০ মিনিট সময় লাগছে। এর মধ্যে সার্ভার ডাউনসহ নানা ধরনের প্রযুক্তিগত বিড়ম্বনাও আছে। অধিক সংখ্যক গ্রাহক আসায় হিমশিম খেতে হচ্ছে নোয়াখালী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।  

বুধবার (৯ অক্টোবর) সকালে নোয়াখালীর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাসপোর্ট অফিসের মেইন ফটকে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। তিল ধরার ঠাঁই নেই অফিসের ভেতরে। তাই বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে আবেদনকারীরা। কেউ এসেছেন নতুন পাসপোর্ট করতে, কেউবা আবার পুরনো পাসপোর্ট নবায়নের জন্য এসেছেন। অফিসের আশপাশের দোকানেও ফরম পূরণে মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

হাতিয়া উপজেলার নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের বাসিন্দা আল আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাসপোর্ট করা এখন অনেক সহজ। নিজে নিজেই সব করা যায়। কোনো অতিরিক্ত ফী বা দালালের প্রয়োজন হয় না। তাই আমার কোনো ভোগান্তি হয়নি। তবে মানুষের অনেক চাপ। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে অনেকক্ষণ। পুলিশি ভেরিফিকেশনের জন্যও কোনো ভোগান্তি নেই। পুলিশ আগ্রহী হয়ে সেবা দিচ্ছে।

সেনবাগ উপজেলার ছাতারপাইয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকালে আসছি পাসপোর্ট করতে, এখন দুপুর হয়েছে তবুও লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। প্রচুর মানুষের ভিড়। ছোটবড়-বয়স্ক অনেকেই এসেছে নতুন পাসপোর্ট করতে। অফিসে এসে একটু বাড়তি চাপ দেখা যাচ্ছে।

চাটখিল উপজেলার পরকোট ইউনিয়নের বাসিন্দা মাওলানা শাহ জামাল ঢাকা পোস্টকে বলেন,  অনেকদিন যাবৎ চিন্তা করছি দেশের বাইরে ঘুরতে যাবো, সময় সুযোগ হয়নি। তাই এখন পাসপোর্ট করতে এসেছি। এমন ভিড় ও চাপ আগে ছিল না। পাসপোর্ট হাতে পেলে দেশের বাইরে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরতে যাব।

সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. আলা উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে পাঁচ বছর আগে। এতদিন সময় সুযোগ হয়নি নবায়ন করার। এখন সুযোগ হয়েছে, তাই নবায়নের জন্য এসেছি। পাসপোর্ট হাতে পেলে দ্রুতই দেশের বাইরে ঘুরতে যাব।

নোয়াখালীর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক নাহিদ নেওয়াজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেশকিছুদিন ধরে পাসপোর্ট আবেদনকারীদের সংখ্যা বেড়েছে। তবে, অফিসের সবাই সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছে। রাত ৯টা বা ১০টার আগে অফিস থেকে যাওয়া যায় না। কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলে একদিনেই ফিঙ্গার দিয়ে আবেদনকারীরা বাসায় চলে যেতে পারে। আর পুলিশি রিপোর্ট এলে প্রিন্টের জন্য পাসপোর্ট রাজধানী ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে এলে জেলার অফিস থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে নিতে পারেন প্রত্যাশীরা।

জানা যায়, জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে পাসপোর্ট আবেদনকারীদের সংখ্যা ছিল চারশ থেকে সাড়ে চারশ। বর্তমানে প্রতিদিন সাতশ থেকে আটশ আবেদন জমা পড়ছে এই অফিসে। এদিকে দ্রুত পাসপোর্টের তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করায় আবেদনকারীরা খুশি। আবেদন আরও দ্রুততার সঙ্গে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

তোফায়েল আহমেদ নামের সেনবাগের বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাসপোর্টের পুলিশি ভেরিফিকেশন নিয়ে আগে অনেক কথা হতো। কিন্তু বর্তমানে পরিবেশ পরিস্থিতি অন্য রকম। কোনো তথ্যের ঘাটতি থাকলে অনায়াসে তদন্ত কর্মকর্তা যোগাযোগ করেন। আমাকে কোনো টাকা দিতে হয়নি আর কোনো ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। 

সালমা আক্তার নামের এক গৃহবধূ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার কিছু কাগজপত্রের গ্যাপ ছিল। ডিএসবি থেকে আমাকে জানালে আমি দ্রুত সেগুলো হোয়াটসঅ্যাপে প্রেরণ করি। এছাড়া ডিএসবির ডিআইও ওয়ান যিনি আছেন তাকে ফোন দেই। তিনি দ্রুত কাজটা করে দিলেন। এমন সেবা যেন সব জেলায় দেয় সেই প্রত্যাশা করছি সব পুলিশ সদস্যের নিকট।

ডিএসবির ডিআইও ওয়ান জিয়া মো. মোস্তাফিজ ভূঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের কেন্দ্রীয়ভাবে হ্যালো এসবি এপস রয়েছে। এতে আবেদনকারী তার স্ট্যাটাস দেখতে পারেন। আমরা প্রতিদিন সেটি চেক করে সমাধান করে দেই। আমি কোনো তদন্ত করি না কিন্তু সুপারভাইজ করে প্রার্থীর কাজের সহয়তা করি। প্রার্থীরা আমাকে ফোনে সমস্যা জানালে তাৎক্ষনিক রেসপন্স করি যেন তিনি কোনো হয়রানির স্বীকার না হন। কারণ পাসপোর্ট মানুষ তার গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার করেন। 

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আব্দুল্লাহ-আল-ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাসপোর্ট অফিস থেকে প্রাপ্ত আবেদনের কাগজপত্র যাচাইয়ের জন্য এক একজন পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রতিটি আবেদনের সত্যতা পাওয়া গেলে দ্রুত রিপোর্ট প্রদান করা হয়। সেক্ষেত্রে কোনো ভোগান্তিই নেই। আবেদনকারীদের অফিসেও আসতে হয় না।

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাসপোর্ট অফিসে দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ ও হয়রানিরোধে জেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে। পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের অভিযোগ আসলে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

হাসিব আল আমিন/আরকে