নওগাঁর বদলগাছীতে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মাঝে দুই দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উপজেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কসহ ছয় নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) রাতে উপজেলা সদরের চৌরাস্তা মোড়ে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে জেলা বিএনপি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

আহতরা হলেন- বদলগাছী উপজেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক সাজু হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক বিল্লু হোসেন, সদর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি রিসালাত বিন নেওয়াজ, আধাইপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি কাওসারুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মুস্তাকিম হোসেন এবং ছাত্রদল নেতা রুহুল আমিন।

ঘটনার সূত্রপাত গত সোমবার (৭ অক্টোবর) বদলগাছী উপজেলার আধাইপুর ইউনিয়নের কার্তিকাহার স্কুল মাঠে ছাত্রদলের কর্মী সমাবেশকে নিয়ে। বিকেলে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও আধাইপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন চৌধুরী। উপজেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওই সমাবেশ সম্পর্কে পূর্বে অবগত না করাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় উপজেলা ছাত্রদলের দলীয় কার্যালয়ে একটি জরুরি সভা করেন ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক সাজু হোসেন। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সকল প্রকার গ্রুপিংকে উপেক্ষা করে উপজেলা বিএনপির সাথে সমন্বয় করে আগামীতে অনুষ্ঠিত সকল দলীয় কর্মসূচি যৌথভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। 

এ সভা শেষে বদলগাছী নতুন ব্রিজ এলাকায় জাকির হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করতে যান ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তবে সেখানে উভয়পক্ষ বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে ফিরে আসেন। এরপর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা যে যার মতো নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যাচ্ছিলেন। ফেরার পথে রাত ৮টার দিকে চৌরাস্তা মোড়ে পৌঁছালে মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রবিউল আলম বুলেট সমর্থিত ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি জাকির হোসেন চৌধুরীর নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। এ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত হয় বদলগাছী উপজেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক সাজু হোসেন। প্রথম দফায় এই সংঘর্ষের দেড় ঘণ্টা পর বুলেটের সমর্থিত ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা পালিয়ে বাড়ি ফেরার পথে রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাদের ওপর দ্বিতীয় দফায় আবারও হামলা চালায় উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ হামলার নেতৃত্বেও ছিলেন জাকির হোসেন চৌধুরী। যেখানে গুরুতর আহত হন অন্তত পাঁচজন।  ঘটনার পর থেকেই থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে পুরো বদলগাছী উপজেলাজুড়ে।

হামলার শিকার বদলগাছী উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক (ভারপ্রাপ্ত) সাজু হোসেন বলেন, আমাদের ওপর অন্যায়ভাবে ২ দফায় হামলা চালানো হয়েছে। উপজেলা বিএনপির অঙ্গ সংগঠন হওয়া সত্বেও শুধুমাত্র গ্রুপিংয়ের জেরে তারা আমাদের দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেয় না। পুরো ঘটনাটি ইতোমধ্যে জেলা ছাত্রদল ও জেলা বিএনপির কর্ণধারদের জানিয়েছি। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নিতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এই সংঘাত আরও প্রকট আকার ধারণ করবে।

হামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, আমাদের উপজেলায় বিএনপির তিনটি গ্রুপ আছে। ছাত্রদলের যেসব ছেলেরা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে তারা আরেক গ্রুপের। স্বৈরাচার হাসিনার আমলে তারা আমার ছবিতে জুতার মালা পরিয়েছিল। দলীয় কার্যালয়ে তালা লাগিয়েছিল। এরপরও সব কিছু ভুলে তাদের সঙ্গে রাখতে চেয়েছিলাম।

তিনি বলেন, গতকাল ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে দেখা করার পর তাদের সদস্য সচিবকে মাঝ রাস্তায় আটকে দিয়েছিল। ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রা তাৎক্ষণিক সদস্য সচিবকে উদ্ধার করেছে। ওই সময়ে স্থানীয়দের সঙ্গে ছাত্রদলের এসব বেপরোয়া ছেলেদের সংঘর্ষ হয়েছে বলে জেনেছি। তাদের ওপর আমি হামলা করাইনি।

মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রবিউল আলম বুলেট বলেন, ছাত্রদলকে বিএনপি লালন করবে। তাদের ভালোমন্দ দেখাশোনা করবে। অথচ তাদের ওপর হামলার ঘটনা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যারা ঘটিয়েছে আসলে তারা নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়েছে। 

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু বকর সিদ্দিক নান্নু বলেন, বদলগাছীতে ছাত্রদল ও বিএনপির মাঝে সংঘর্ষের কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। এমন ঘটনা ঘটে থাকলে জড়িতদের ছাড় দেবে না জেলা বিএনপি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। 

আরমান হোসেন রুমন/আরএআর