সাতক্ষীরার তালা উপজেলার নগরঘাটা গ্রামের হাফিজুল ইসলাম (৩৫)। পরিবার নিয়ে একটি মাটির ঘরে বসবাস করতেন তিনি। দীর্ঘদিন জলাবদ্ধতা থাকার কারণে মাটির ঘরটি ভেঙে পড়েছে।

এরপর থেকে হাফিজুল ইসলাম পরিবারের তিন সদস্যসহ আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। শুধু হাফিজুল ইসলাম নন নগরঘাটা গ্রামের আরও অনেকের বসতঘর এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা সবাই এখন গৃহহীন।

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) হাফিজুলের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, পানি নেমে গেলেও এখনও এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রিত অবস্থায় দিন পার করছেন তারা। 

হাফিজুল ইসলামের ছেলে ছাব্বির হোসেন প্রতিবন্ধী। জলাবদ্ধতার কারণে তার মাটির বাড়িটি সম্পূর্ণরূপে ভেঙে গেছে। রান্না করার মাটির চুলাও ভেঙে গেছে। বাড়িঘর মেরামত করা দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের কাছে। ওই আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের রান্না শেষ হলে নিজেদের রান্না করবেন হাফিজুল ইসলামের স্ত্রী শেফালী আক্তার।

শেফালী আক্তার বলেন, বসতঘর ভেঙে যাওয়ার পর পাশের এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। জলোচ্ছ্বাসে বসতবাড়ি প্লাবিত হয়ে যায়। প্রতিবন্ধী এক ছেলেকে নিয়ে কোনো উপায় না পেয়ে আত্মীয়র বাড়িতে গিয়ে উঠি। এভাবে আর কত। আল্লাহ ভালো জানেন কিভাবে বসবাস করব। 

তিনি বলেন, পানিতে বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা সরকারের কাছ থেকে এখনো কোনো সহায়তা পাইনি। এখন আমাদের একমাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁই শেষ হয়ে গেছে। 

হাফিজুল ইসলাম জানান, স্ত্রী, সন্তান নিয়ে মাটির বাড়িতেই বসবাস করতেন তিনি। দিনমজুরির মাধ্যমেই দিন চলছিল তার। বন্যা জলাবদ্ধতায় তার ঘরটি বিধ্বস্ত হয়েছে। এখন তাদের একমাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁই শেষ হয়ে গেছে। সহায়তা ছাড়া নতুন করে ঘর বানানো আমার পক্ষে সম্ভব না। 

স্থানীয় বাসিন্দা সালেহা জান্নাত বলেন, বাঁধ ভেঙে স্রোতের পানিতে তাদের ঘরবাড়ি একদম শেষ হয়ে গেছে। মূলত প্রতিবন্ধী হাফিজ দিনমজুরের কাজ করেই তাদের পরিবার চলায়। তাদের একটি ছেলে সেও প্রতিবন্ধী। ভিটেমাটি ছাড়া তেমন আর কোনো সম্পদও নেই। এ পরিস্থিতিতে সমাজের বিত্তবানরা তাদের পাশে দাঁড়ালে তারা অনেক উপকৃত হবে।

এদিকে সাতক্ষীরা জেলার বেশিরভাগ উপজেলায় এখন একই চিত্র। যেখানে খেয়ে পরে টিকে থাকাই যের কষ্টের। সেখানে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় হাজারো মানুষ।

তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মো. রাসেল বলেন, আমাদের যে কোনো মানুষের জন্য সরকারের গৃহহীন প্রোগ্রাম চালু আছে। আমাদের কাছে আবেদন দিলে আমরা খোঁজ খবর নিয়ে খুব দ্রুত ব্যবস্থা করব।  

ইব্রাহিম খলিল/আরকে