‘আমার জীবনের উপার্জন করা সব শেষ। নিজের এই জীবনের যা কিছু ছিল সব দিয়ে একটা মুরগির খামার দিয়েছিলাম। আর এই খামারটা পাহাড়ি ঢলের পানি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। আমার ক্ষতিপূরণ চাওয়ার ইচ্ছা নেই। নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও ঝিনাইগাতী উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মহারশী নদীর স্থায়ী বেড়িবাঁধ চাই। স্থায়ী বেড়িবাঁধ না হলে আমাদের এই এলাকার মানুষের কোনোদিনই স্থায়ী সমাধান হবে না। আমাদের এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো একদিন ভারী বর্ষণ হলে পরদিন থেকেই পাহাড়ি ঢল মহারশী নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে চলে আসে। সরকারের কাছে অনুরোধ করি, আমাদের এই নদীর দুই পাড়ে বেড়িবাঁধ করে দিন।’

নিজের আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ব্রিজপাড় এলাকার বেনিয়ামিন। গত ৪ অক্টোবর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও পানির প্রবল স্রোত মহারশী নদীর রামেরকুড়া এলাকার তীর ভেঙে তার বসতভিটা ও চারটি মুরগির খামার ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। মুরগির খামারে দুই হাজার লেয়ার জাতের মুরগি, ডিম ও আসবাবসহ তার মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৫ লাখ টাকা।

একইভাবে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ওই এলাকার আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এই নদী প্রতি বছরই ভাঙে। কোনো টেকসই বাঁধ না থাকার কারণে দুই পাড় ভেঙে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়; ঘর বাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এই ক্ষতি থেকে বাঁচতে আমাদের এই নদীর তীরে স্থায়ী বাঁধের কোনো বিকল্প নেই।’

গত ৪ অক্টোবর পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়ে ঝিনাইগাতী উপজেলার অর্ধ শতাধিক গ্রাম। মহারশীতে কয়েকটি অংশে ভাঙনের ফলে ঝিনাইগাতী সদর বাজারে চলে পাহাড়ি ঢলের ধ্বংসযজ্ঞ। স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছরই মহারশী নদীর পানির তোড়ে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এর স্থায়ী সমাধান না হওয়ায় জানমালের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। দ্রুত একটি বেড়িবাঁধ দেওয়া না হলে ভবিষ্যতেও অনেক বড় ক্ষতি হবে ঝিনাইগাতীবাসীর।

ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য জাহিদুল হক মনির বলেন, মহারশী নদীর ভাঙনে প্রতি বছর বর্ষার সময় ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদ, সরকারি দপ্তর ও সদর বাজার হুমকির মুখে পড়ে। এই পাড় ভেঙেই পুরো ঝিনাইগাতী তলিয়ে যায়। বাজার ভেসে যায়, ব্যবসায়ীদের ভয়াবহ ক্ষতি হয়। তাই মহারশী নদীর তীরবর্তী বেড়িবাঁধ খুবই প্রয়োজন। এই বাঁধটি ঝিনাইগাতীবাসীর প্রাণের দাবি। এই নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলো প্রতি বছর প্লাবিত হয়। এই তীর ভেঙেই পুরো ঝিনাইগাতীতে পানি প্রবেশ করে। এখানে একটি স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ জরুরি।

ঝিনাইগাতী ব্রিজ পাড় এলাকার স্থানীয়দের দাবি, এই মহারশী নদীর তলে প্রতি বছর যে পরিমাণ পলি জমে সেটা খনন করে নদী েশাসনের ব্যবস্থা করে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলে এই সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব। এই মহারশী নদীর ভাঙনের কারণে নদীর দুই তীরের মানুষের আবাদি জমিসহ বসত ভিটা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বারবার ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে বলেন, ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কথা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে।

মো. নাইমুর রহমান তালুকদার/এসএসএইচ