অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম উর্মি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে জানিয়েছেন তার মা নাসরিন জাহান। তিনি বলেন, আমার মেয়ের কোটায় বা কোনো সুপারিশ-পরিচয়ে চাকরি হয়নি। সে অনেক পড়াশুনা করেছে। এই চাকরি তার অনেক কষ্টের ফসল। তবে সে (উর্মি) চাকরির বিধি লঙ্ঘন করছে। এটা তার ঠিক হয়নি। এটা একটা বড় অপরাধ। সব জায়গাতেই চাকরিবিধি মানতে হবে।

সোমবার (০৭ অক্টোবর) রাত পৌনে ১২টায় তাপসী তাবাসসুম উর্মির মা নাসরিন জাহান এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী সরকারি চাকরি করেছেন। তিনি ১৪তম বিসিএস ছিলেন। আমিও সরকারি চাকরি করি। সব জায়গায় চাকরিবিধি মানতে হবে। আমার বাচ্চারা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। আমরা সাধারণ জীবনযাপন করি। আমরা দুজনেই (স্বামী-স্ত্রী) শিক্ষক। রাজনীতি আমার পছন্দ না। বাচ্চাদের শুধু বলেছি, তোমরা লেখাপড়া করে প্রতিষ্ঠিত হও।

এ সময় উর্মি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৪০তম বিসিএস এর আগে ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সে যুক্ত ছিল। কিন্তু ও (উর্মি) আসলে বিসিএস পরীক্ষার সময় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে, ৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলন নিয়ে অনেক ইতিহাস পড়েছে। এগুলো পড়েই হয়ত বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার প্রতি তার আগ্রহ বেড়েছে। এটা আমার ধারণা। তবে আমরা যুদ্ধ করিনি, যুদ্ধ দেখিওনি। যে যুদ্ধ হয়েছে, সেটা ইতিহাস। ইতিহাসকে অস্বীকার করার উপায় নেই। আমরা আমাদের মা-বাবাকে অস্বীকার করতে পারবো কি? বলেও প্রশ্ন রাখেন নাসরিন জাহান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাপসী তাবাসসুম উর্মি ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলার সদর ইউনিয়নের নসিবপুর গ্রামের মো. ইসমাইল হোসেনের মেয়ে। তার বাবা ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা শহীদ স্মৃতি কলেজের সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া তিনি ময়মনসিংহ নগরীর ঐতিহ্যবাহী আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। তবে বর্তমানে তিনি অবসর জীবনযাপন করছেন।

সেই সঙ্গে উর্মির মা নাসরিন জাহান বতর্মানে হাজী কাশেম আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ মুক্তাগাছায় গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। বতর্মানে তারা ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের পিছনে কাশর জেল রোড এলাকায় নিজ বাসায় বসবাস করেন।

পূর্বধলা সদর ইউনিয়নের নসিবপুর গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য আজিম উদ্দিন জানান, উর্মি ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। তিনি মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ালেখা শেষ করে ২০২২ সালে ঊর্মি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে ঊর্মি সবার বড়। ছোট ভাই জার্মানির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন। এর বেশি তাদের সম্পর্কে আমার জানা নেই।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন তাপসী তাবাসসুম উর্মি। সেখানে তিনি লেখেন, ‘সাংবিধানিক ভিত্তিহীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, রিসেট বাটনে পুশ করা হয়েছে। অতীত মুছে গেছে। রিসেট বাটনে ক্লিক করে দেশের সব অতীত ইতিহাস মুছে ফেলেছেন তিনি। এতই সহজ। কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে আপনার, মহাশয়।’

এরপর তার এই পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনায় মুখে পড়েন উর্মি। এ ঘটনায় গত রোববার উর্মিকে ওএসডি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। এরপর সোমবার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

আমান উল্লাহ আকন্দ/এফআরএস