গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেছেন, দেশের সুনাগরিকের মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে হলে আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে সমূলে উৎখাত করতে হবে। ফ্যাসিবাদরা আবারও মাথাচারা দেওয়ার পাঁয়তরা করছে। তাই ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানকে ধরে রাখতে সকল বিভাজন ভুলে ঐক্যবদ্ধ শক্তির কোনো বিকল্প নেই।

সোমবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

জোনায়েদ সাকি বলেন, গণতান্ত্রিক স্বাধীন দেশে ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার ঘটনা ঘটিয়ে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশেকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করতে মরিয়া হয়েছে ফ্যাসিবাদের দোসররা। দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে গণতন্ত্র পাহারা দেওয়ার সুরক্ষা তৈরি করতে হবে। যে সুরক্ষার মধ্যদিয়ে আগামী দিনে ন্যায়পূর্ণ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠিত হবে। ছাত্র-জনতার সঙ্গে সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে গণসংহতি আন্দোলন।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা রক্তস্নাত গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে যারা কটাক্ষ করার চেষ্টা করবে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান হবে স্পষ্ট। তাই ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে ম্লান করতে যারাই মরিয়া হবে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান জোনায়েদ সাকি।

তিনি আরও বলেন, জীবনের চেয়ে সম্মান অনেক বড়, ছাত্ররা সেটি উপলব্ধি করতে পেরেছিল। ভয়ের রাজত্ব তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) তৈরি করেছিল। ভয় দেখিয়ে পর পর তিনটা নির্বাচন দিয়ে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। তাদের গুম-খুন আর মিথ্যা মামলায় বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দিনের পর দিন আদালতে কাঠগড়ায় ঘুরতে হয়েছে। তারা যে শাসন চালাতে চেয়েছে সেটার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে ছাত্রসমাজ। ভয়ের রাজত্বটাই ভেঙে দিয়েছেন আবু সাঈদ।

হাজার হাজার ছাত্র-জনতা মারা গিয়েছে। এই শহীদেরা আমাদের আগত প্রজন্মের কাছে বিরাট প্রেরণা।

জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা এই শহীদদের যথার্থ মূল্যায়ন করতে পারি। বিশেষভাবে তাদের পরিবার-পরিজন বাকি জীবন কীভাবে কাটাবেন, কিংবা আহতরা যার একটা পা হারিয়েছেন, হাত হারিয়েছেন। যিনি একটা চোখ হারিয়েছেন উদ্বেগ তাদের মধ্যে আছে। আমরা শহীদ পরিবার ও আহতদের কণ্ঠ থেকে কোনো আক্ষেপ শুনতে চাই না।

তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রত্যেক শহীদ ও আহতদের পরিবারের দায়িত্ব নিতে হবে। তাদের জন্য মর্যাদাপূর্ণ ব্যবস্থা করতে হবে। বাস-ট্রেনে চলাচল থেকে তাদের পরিবার কীভাবে চলবে, তাদের পরিবারের সরকারি-বেসরকারি চাকরি কিংবা যারা আহত হয়েছেন তারা কীভাবে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে পারবেন, কীভাবে বীরের মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবেন, সেসব উদ্যোগ নিতে হবে।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই সরকার বিদায় নিয়েছে কিন্তু ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থাটা এখনো আছে। সেই জন্যই সম্ভবত পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী এখনো বাণী দিয়ে যাচ্ছেন চট করে ঢুকে পড়বেন। ঢুকে পড়ে নাকি তারা আবার ক্ষমতা দখল করবেন। ছাত্র-জনতা প্রয়োজনে আবারো ঐক্যবদ্ধভাবেই জীবনের বিনিময়ে হলেও ফ্যাসিস্টদের সেই ষড়যন্ত্র রুখে দেবে।

গণসংহতি আন্দোলনের রংপুর জেলা শাখার যুগ্ন আহ্বায়ক তৌহিদুর রহমানের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় আরও আলোচক ছিলেন, রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রভাষক সিরাজাম মুনিরা, রংপুর জেলা ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার লতিফুর রহমান, রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি শাহরিয়ার সোহাগ।

স্মরণ সভার শুরুতে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে রংপুরের নিহত শহীদ পরিবারসহ আহতদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নিরবতা পালন করা হয়। পরে শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতরা চব্বিশের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করেন।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএমকে