দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের স্টাইলের পরিবর্তন ছাড়া কোনো উদ্যোগ সফল হবে না বলে মন্তব্য করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান।

তিনি বলেন, আমলাতান্ত্রিক এবং কেতাবি ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার স্টাইল পরিবর্তন করতে না পারলে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ সফল হবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তো বটেই, ভবিষ্যতে যারা রাষ্ট্রপরিচালনা করবেন; তারাও যেন দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের স্টাইলের পরিবর্তন নিয়ে আসে।

শনিবার (৫ অক্টোবর) সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ আবু সাঈদের স্মরণে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের-পিপিআরসির দুই দিনব্যাপী হেলথ ক্যাম্পের সমাপনী দিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হোসেন জিল্লুর রহমান এসব কথা বলেন। তিনি ব্র্যাকের চেয়ারপারসন, ব্র্যাকের গ্লোবাল বোর্ডের সিনিয়র ট্রাস্টি ও পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান। 

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, এই যে এত বড় কার্যক্রম, সংস্কার। আমরা বাংলাদেশকে কেমন করতে চাই। এই আকাঙ্ক্ষা উচ্চারিত হয়েছে এবং আত্মত্যাগের মধ্যেই এটা হয়েছে। কিন্তু এগিয়ে যাবার পথটা নির্ধারণে আমরা যদি আমলাতান্ত্রিক স্টাইলে কাজ করি, তাহলে সেটা হবে না

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, মাঠে বাস্তবতার সঙ্গে ঢাকার আলোচনা সমন্বয় না হলে কাঙ্ক্ষিত সংস্কারও অর্জিত হবে না। শেলফে বন্দি হবে কার্যকর রাষ্ট্র নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা। মাঠের সঙ্গে কেন্দ্রের ফাঁকগুলো কমিয়ে আনা দরকার। বিশেষ করে মাঠের মধ্যে যারা আছেন, যারা সরকারের হয়ে মাঠে কাজ করছেন। তাদের কথা বেশি করে শুনতে হবে কেন্দ্রকে। দূরত্ব কমাতে হবে মাঠ এবং ঢাকার।

তিনি আরও বলেন, যদি মাঠ বাস্তবতাকে সমন্বয় করা না হয়, তাহলে আমলাতান্ত্রিকতার ঘেরাটোপের মধ্যে আমাদের এত বড় আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন সংস্কার সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে। আরেকটা হচ্ছে আমরা শুধু তাত্ত্বিক, এক্সপার্ট বা কেতাবি সমাধানের দিকে পরিচালিত হবো। যা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে কখনোই বাস্তবে রূপ দিতে পারব না।

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, এখন সরকার চালানোর স্টাইলের মধ্যে একটা অন্যতম পরিবর্তন আনা দরকার। কারণ আমাদের স্টাইলটাই হয়ে গিয়েছিল আমলাতান্ত্রিক এবং মাঠ বাস্তবতা উপেক্ষা করে। সংস্কারে যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই বিষয়ে পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়। তাহলে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান আকাঙ্ক্ষা কখনোই পূরণ হবে না।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, সংস্কার বলি বা কার্যকর রাষ্ট্র নির্মাণের কথা বলি। সব কিছুতেই তৃণমূল বা মাঠ বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিতে হবে। সরকারকে মাঠ বাস্তবতাগুলোতে প্রতিনিয়ত নজরে আনা দরকার। তার ভিত্তিতে তারা যে নীতি বা সহায়তা বা সংস্কারের চিন্তা করছে সেগুলো যেন বাস্তবভিত্তিক হয়।

পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) উদ্যোগে শুক্রবার ও শনিবার রংপুরের পীরগঞ্জে জাফরপাড়া মাদরাসা মাঠে বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে জটিলসহ বিভিন্ন রোগ নির্ণয়, প্রেসক্রিপশন, প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার এবং ওষুধপত্র দেওয়া হয়। দুদিনের এই কার্যক্রমে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরের মেডিকেল টিমের কাছ থেকে ৮০০ জনেরও বেশি রোগী চিকিৎসাসেবা পেয়েছেন।  

উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাঈদ। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহীদ। আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পর সারা দেশে আন্দোলন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এর ধারাবাহিকতায় গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়।

গত ২৪ আগস্ট রংপুর সফরে এসে শহীদ আবু সাঈদের গ্রামের বাড়ী পীরগঞ্জের বাবনপুরে আসেন হোসেন জিল্লুর রহমান। আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের পর পরিবারের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের সময় ওই এলাকার চিকিৎসাসেবা নিয়ে কথা বলেন আবু সাঈদের বাবা। সে সময় এলাকার গরিব ও অসহায় মানুষদের বিনামূল্যে ফ্রি চিকিৎসাসেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন হোসেন জিল্লুর রহমান।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর