শারদীয় দুর্গোৎসবের আর বেশি দিন বাকি নেই। কৈলাশ থেকে মর্ত্যে আসবেন দেবী দুর্গা। সারাদেশের মতো তাই নাটোরেও চলছে দেবী বন্দনার প্রস্তুতি।

ইতিমধ্যেই জেলার সকল মন্দিরের প্রতিমা তৈরির কাজও প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। শেষ মুহূর্তে রংতুলিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রতিমা শিল্পীরা। পাশাপাশি চলছে মণ্ডপগুলোতে সাজ সজ্জার কাজ।

জেলা প্রশাসন ও পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, নাটোরের ৭টি উপজেলায় ৩৫০টি পূজা মণ্ডপে দুর্গাৎসব অনুষ্ঠিত হবে। গতবছর যার সংখ্যা ছিল ৩৯২টি। পরিবর্তীত পরিস্থিতি ও বন্যাসহ নানা কারণে এ বছর ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণের কারণে কমেছে মণ্ডপের সংখ্যা, বলছে পূজা উদযাপন পরিষদ। 

পূজা উদযাপন নির্বিঘ্নে করতে ইতিমধ্যেই জেলায় পূজা উদযাপন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কয়েকদফায় মিটিং করেছে প্রশাসন। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোও আলাদা আলাদাভাবে বৈঠক করছে পূজা উদযাপন কমিটির সঙ্গে। 

জেলা শহরের বেশ কয়েকটি মন্দির ও প্রতিমা তৈরির এলাকা (পালপাড়া) ঘুরে দেখা গেছে, ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাঁদামাটির কাজ। এখন কিছু কিছু মণ্ডপে চলছে দেবী দুর্গার গায়ে রং-তুলির আঁচড়ের কাজ। পাশাপাশি মণ্ডপের আলোকসজ্জা আর প্যান্ডেল তৈরি কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন ডেকোরেটরের লোকজন। 

শহরের লালবাজারে জয়কালী বাড়ির মন্দিরের পাশে নিজ বাড়িতে প্রতিমা তৈরি করছিলেন বিশ্বজিৎ পাল। তার সঙ্গেই একতালে প্রতিমায় ধান যুক্ত করছিলেন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে কাব্য পাল ।

বিশ্বজিৎ পাল বলেন, প্রতিবছর পাঁচটা করে প্রতিমা বানালেও এবার তিনটা তৈরি করেছি। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার চাহিদা একটু কম। শেষ সময়ে অর্ডার করায়, সময় কম পেয়েছি। পাশে ছোট ছেলেসহ আমার স্ত্রী ও কাজে সহযোগিতা করছে। 

ছেলে কাব্য পাল বলেন, আগের বছরেও বাবাকে কাজে সহযোগিতা করেছি। কিন্তু এবছর শ্রমিকের মূল্য বেশি হওয়ায় পড়াশোনা ছাড়া বাকি পুরো সময়টা বাবাকে সহযোগিতা করছি।

শহরের পালপাড়ায় এলাকার প্রতিমা তৈরির কারিগর সুকুমার পাল বলেন, চলতি বছর প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম অনেক বেড়েছে। ফলে আমাদের যে টাকা আয় হওয়ার কথা, তা আর হচ্ছে না। আমরা প্রতিবছর ৮টি মণ্ডপের জন্য প্রতিমা তৈরি করি। মন্দির কমিটি গুলো  আগেই আমাদের অর্ডার দিয়ে যায়। এবছর সর্বোচ্চ দেড় লক্ষ থেকে ৩৫ হাজার টাকার প্রতিমা তৈরি করেছি।

 

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নাটোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রসাদ কুমার তালুকদার বাচ্চা জানান, পারিবারিকভাবে যারা দুর্গাপূজা করতেন তারা অনেকে এ বছর করছেন না। অনেক সময় একই মহল্লায় দুটি পূজা হয়েছে সেই সব এলাকায় আমরা একসঙ্গে পূজা করতে উদ্বুদ্ধ করেছি, ফলে মন্ডপের সংখ্যা এ বছর কমেছে। 

এ বিষয়ে নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মাছুদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, একযোগে নাটোরের ৩৫০টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। উৎসবটি উপলক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য ও হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে পূজা উদযাপন উপলক্ষ্যে  জেলা পর্যায়ে প্রস্তুতিমূলক মিটিং সম্পন্ন করা হয়েছে। সেখানে শারদীয় দুর্গোৎসব নির্বিঘ্নে করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসমূহ হাতে নিয়েছি।

গোলাম রাব্বানী/আরকে