তীব্র দুর্গন্ধযুক্ত খাসির মাংসের কারণে এলাকার মানুষের তোপের মুখে পড়া মুখরোচক খাবারের প্রতিষ্ঠান সুলতান’স ডাইন সিলেট শাখা গত দুই-তিনদিন থেকে ছিল টক অব দ্যা টপিক। এর মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনে গিয়ে তাদের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাফাই গেয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) স্বাস্থ্য বিভাগ। এতে আবারও নতুন করে সুলতান’স ডাইনের সঙ্গে আলোচনায় এসেছেন সিসিকের দুই কর্মকর্তা। কোনো ধরনের প্রতিবেদন বা মূল ঘটনাস্থলে না গিয়ে এ ধরনের ভিডিও বক্তব্য দেওয়ার বিরোধিতা করেছেন খোদ সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম। জানিয়েছেন কোনো ধরনের বেআইনি সংশ্লিষ্টতা পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থার নেওয়ার কথাও।

গত দুদিন আগে ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে হাজির হয়। বিষয়টি নিয়ে যাতে সংবাদ প্রকাশ না করা হয় সে জন্য সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের ম্যানেজ করতে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু করে সুলতান’স ডাইন কর্তৃপক্ষ। এতে অনেকেই ম্যানেজ হয়ে যান বলে অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনার পর জনপ্রিয়  অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে ‘তীব্র দুর্গন্ধ, সুলতান’স ডাইনের খাসির মাংস নিয়ে প্রশ্ন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে দৃষ্টিগোচর হয় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার। পরবর্তীতে তার নির্দেশে সিলেট জেলা স্যানেটারি পরিদর্শক ও নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তার একটি দল এ বিষয়ে তদারকিতে যান।

তদারকির সময় মূল ঘটনাস্থলে না গিয়ে বা সিসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো ধরনের অফিসিয়াল পত্র, নির্দেশনা ছাড়া জেলা স্যানেটারি কর্মকর্তাসহ আরেকজনের ৫৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এর পরেই বিষয়টি নিয়ে বিভিন্নজনের মাঝে দেখা দেয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ঘটনাস্থলে না গিয়ে এমন ভিডিও দেওয়ায় ক্ষুব্ধ সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাও।

সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (০৩ অক্টোবর) সিসিকে সংযুক্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুইজন খাদ্য নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও দুইজন স্যানেটারি ইন্সপেক্টর সুলতান’স ডাইন পরিদর্শনে যান। তারা সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারস্থ  সুলতান’স ডাইনের মাংস সংগ্রহশালা দাড়িয়াপাড়া ইমন হাউজিংয়ে না গিয়ে রেঁস্তোরা পরিদর্শন করেই সাফাই গেয়েছেন। এটি নিয়ম বহির্ভূতভাবে করা হয়েছে বলে মনে করছেন অনেক কর্মকর্তারাই।

সুলতান’স ডাইন পরিদর্শনে যাওয়া কর্মকর্তারা হলেন- সিলেট সিটি করপোরেশনে সংযুক্ত স্যানেটারি ইন্সপেক্টর বেনু ভূষন দাস ও আব্দুল মুমিত, নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম এবং মনিতা রানী।

তারা এ ঘটনার উৎপত্তিস্থল দাড়িয়া পাড়ার ইমন হাউজিং পরিদর্শনে যাননি। উপরন্তু স্যানেটারি ইন্সপেক্টর বেনু ভূষন দাস ও নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে দোষ দিয়ে সুলতান’স ডাইনের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে, এমন মন্তব্য করেছেন। তারা সুলতান’স ডাইনের গুণগত মান ও পরিচ্ছন্নতার প্রশংসাও করেন। আর তাদের এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন সুলতান’স ডাইনের কর্মকর্তারা।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সুলতান’স ডাইন পরিদর্শনে দুইজন স্যানেটারি ইন্সপেক্টর ও দুইজন নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক যান। তাদের পাঠানো হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে ও মাংস কোথা থেকে আসে না আসে সেটা জানতে। কিন্তু তাদের পক্ষে গিয়ে সাফাই গাওয়ার জন্য পাঠানো হয়নি। বক্তব্য দেওয়ার এখতিয়ারও তাদের নেই। তারা কেবল দেখে এসে প্রতিবেদন দিতে পারতেন। তাদের এই বক্তব্যের দায় আমি নিতে পারবো না। তাছাড়া সুলতান’স ডাইন তাদের পক্ষে সাফাই গাইতে নিয়ে গেছে কিনা এবং আর্থিক কোনো সুবিধার বিনিময়ে তারা এহেন কর্মকাণ্ড করেছেন কিনা সে বিষয় খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাই আগামী রোববার (০৬ অক্টোবর) সুলতান’স ডাইনের কর্মকর্তাদের যাবতীয় ডকুমেন্ট নিয়ে সিটি করপোরেশনে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে স্যানেটারি ইন্সপেক্টর বেনু ভূষন পাল বলেন, গণমাধ্যমে প্রতিবেদন দেখে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অনুমতিতে ওই প্রতিষ্ঠানে যাই। আমরা সেখানে কোনো মিডিয়ায় বক্তব্য দেইনি। তবে সুলতান’স ডাইনের ভালো দিক ও নেতিবাচক দিক নিয়ে কিছু কথা বলেছি। তারা আমার বক্তব্য রেকর্ড করে ভালো দিকটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খণ্ডিত অংশ ছেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, মূলত ঘটনাস্থল দাড়িয়াপাড়াস্থ যে বাসায় মাংস সংরক্ষণ করা হতো বা যেখান থেকে সুলতান’স ডাইনে মাংস দেওয়া হয় সেখানে যাওয়া হয়নি। এই স্থানটি সম্পর্কে জানতামও না। এমনকি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে কোনো প্রতিবেদনও দেইনি।

এদিকে পরিদর্শনে যাওয়া খাদ্য কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নির্দেশে আমরা চারজন সুলতান’স ডাইন পরিদর্শনে যাই। পরিদর্শনকালে তারা পঁচা মাংসের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। আমরা সেই সময়ে পঁচা বা বাসি কিছুর আলামত পাইনি। সেখানে কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে কথা বলে, সেই বক্তব্য অজ্ঞাতসারে তারা রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেব।

মাসুদ আহমদ রনি/এফআরএস