সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। আর কদিন পরেই দেবী দুর্গা পিত্রালয়ে আসবেন। তার সঙ্গে আসবেন সন্তান লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক আর গণেশ। এ বছর দেবী দুর্গার আগমন হবে দোলায় বা পালকিতে।

মা দুর্গা পুত্র-কন্যা নিয়ে কৈলাশে ফিরে যাবেন গজ বা হাতির পিঠে আসীন হয়ে। শাস্ত্রমতে, দুর্গা যদি পালকিতে করে আসেন, তাহলে ফল মহামারি, ভূমিকম্প, খরা, যুদ্ধ ও অতিমৃত্যু। যাতে বিপুল প্রাণহানি অনিবার্য। দেবী ফিরবেন গজ বা হাতিতে। দেবীর আগমন বা গমন হাতিতে হলে মর্ত্যলোক ভরে ওঠে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধিতে। অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি নয়, ঠিক যতটা প্রয়োজন ততটা বর্ষণ।

পূজা উদ্‌যাপন উপলক্ষ্যে নেত্রকোনার পূজা মণ্ডপগুলোতে মাটির কাজ শেষ। এখন চলছে প্রতিমায় রংতুলির কাজের মাধ্যমে প্রতিমার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা। দিন-রাত পর্যন্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। উৎসবকে ঘিরে পাড়া-মহল্লায় প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কিছুটা মন্দাভাব থাকলেও প্রতিমা তৈরিতে উৎসাহ কমেনি। তবে প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন না মৃৎশিল্পীরা।

৩০ বছর ধরে কাজ করা প্রতিমা শিল্পী সন্তোষ চন্দ্র পাল বলেন, প্রতিমা তৈরিতে এখন পর্যন্ত আমাদের মাটির কাজ শেষ হয়েছে। এখন রঙের কাজ শুরু করেছি। এ বছর প্রতিমা তৈরির যে বাজেট, তাতে প্রতিমা তৈরি করে লাভ হবে না। তবুও কাজটা করতে হয়। কারণ এটা আমাদের সনাতন ধর্মের বড় উৎসব। এই কাজটা একটা আনন্দ নিয়ে করি এবং এটা আমাদের পারিবারিক পেশা। প্রতি বছরই প্রতিমা তৈরির কাজ করে থাকি। এ বছর আমি তিনটা প্রতিমা তৈরির কাজ নিয়েছি।

সন্তোষ চন্দ্র পালের ছেলে ভজন চন্দ্র পাল মাস্টার্সে পড়াশোনা করেন। পাশাপাশি তাদের পারিবারিক পেশায় বাবাকে সহযোগিতা করছেন। তিনি বলেন, আমি পড়াশোনার পাশাপাশি আমাদের পারিবারিক পেশায় প্রতিমা তৈরিতে আমার বাবাকে সহযোগিতা করি। আমি আমার এই পারিবারিক পেশাটা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। তবে প্রতিমা তৈরিতে যে পরিমাণ বাজেট থাকে সেই বাজেটে সুন্দরভাবে প্রতিমা তৈরি করাটা একটা চ্যালেঞ্জের বিষয়। এ জন্য পূজা উদ্‌যাপন কমিটির কাছে আমার আবেদন থাকবে যেন প্রতিমা তৈরির বরাদ্দ আরেকটু বাড়ানো হয়।

এছাড়া পূজা মণ্ডপের সংখ্যা কমে যাওয়ায় প্রতিমা সাজানোর উপকরণের দোকানগুলোতে কমেছে বেচাকেনা। দোকানিরা বলছেন সার্বিক পরিস্থিতির কারণে কাস্টমার তুলনামূলক কম আসছেন।

প্রতিমা সাজানোর উপকরণের দোকান ‘সর্বমোহন বণিকের দোকানের’ রাজিব বণিক জানান, দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে এবার বেচাকেনা কম। দেশে যে কঠিন পরিস্থিতি চলছে এবং পূজা অনেক কম হচ্ছে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তুলনামূলক বেচাকেনা কম এ বছর। পাশাপাশি জিনিসপত্রের দাম তুলনামূলক বেশি যার কারণে সবাই যার যার বাজেট অনুযায়ী অল্প পরিমাণে জিনিসপত্র কিনছেন।

নেত্রকোণা জেলা পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক  লিটন পণ্ডিত বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর পূজা মণ্ডপের সংখ্যা বেশ কমেছে। জেলার ১০ উপজেলায় ৪৬৫টি পূঁজা মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয় দুর্গোৎসব। গত বছর ৫৬০ টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই হিসেবে গত বছরের থেকে এ বছর ৯৫টি পূজা কম হচ্ছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক সংকটসহ নানা কারণে এ বছর পূজা মণ্ডপের সংখ্যা ও বাজেট কমেছে। তবে নেত্রকোণা জেলা অনেক আগে থেকেই একটি সম্প্রীতির শহর। এখানে শারদীয় দূর্গাপূজার অষ্টমী, নবমী এবং দশমীতে হিন্দু-মুসলমান, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পূজা দেখতে বের হয় এবং পূজা মণ্ডপে সব জাতির লোকজন আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন।

নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গা পূজা সম্পন্নের জন্য সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে জানিয়ে নেত্রকোণা জেলার পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ বলেন, আইনশৃঙ্খলার দিক থেকে আমরা প্রত্যেকটা পূজা মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা বাধ্যতামূলক করেছি। পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী রাখার ব্যবস্থা করেছি, যেন তারা পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের পুলিশের পক্ষ থেকে মোবাইল ডিউটি থাকবে, স্ট্যাটিক ডিউটি থাকবে এবং ক্লাস্টার বেসিসে ফোর্স ডেপ্লয়মেন্ট করা থাকবে নিরাপত্তার স্বার্থে। পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থা যারা আছেন, তারা পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা নেবেন। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা এখন পর্যন্ত ভালো। আশা করছি সুন্দর পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা সবাই উদ্‌যাপন করতে পারবেন।

চয়ন দেবনাথ মুন্না/এফআরএস