কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জেরে পরিকল্পিতভাবে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নইমুদ্দিন সেন্টুকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।

বুধবার (২ অক্টোবর) নিহত চেয়ারম্যানের ছেলে আহসান হাবীব কনক দৌলতপুর থানায় এই মামলা করেন।

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলায় মোট ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়াও এই মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৮-১০ জনকে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার দেখায়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

মামলার আসামিরা হলেন—কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর এলাকার তরিকুল ইসলাম টুকু (৪৫), একই গ্রামের সোহাগ হোসেন ওরফে গিট্টু (২২), রওশন (২৩), রাসেল (২৭),  লালন (২৬), নাঈম (২২), শামসের আলী গিট্টু (২৩), আল আমিন (২০), হিমেল (২৭) ও ইরাক (৩০)। আসামিরা টুকুর নেতৃত্বে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।

এর আগে গত সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের এই চেয়ারম্যানকে তার নিজ অফিস কক্ষে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই দিন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। পরে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ফিলিপনগর স্কুল মাঠে তার জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।

নিহত নইমুদ্দিন সেন্টু ফিলিপনগর বাজারপাড়ার মুতালিব সরকারের ছেলে। তিনি অনেক আগে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। একসময় উপজেলা বিএনপির সহসভাপতিও ছিলেন। পরে আবারও তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও দরটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছেন। দুইবার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তার ভালো সখ্যতা ছিল।

জানা গেছে, তীব্র গণ-আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ফিলিপনগর এলাকায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে টুকু বাহিনী। তরিকুল ইসলাম টুকুর নেতৃত্বে ওই অঞ্চলে হাটঘাট দখল, লুটপাট, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র ব্যবসা, প্রতিপক্ষের লোকজনের ওপর হামলা, হুমকি-ধামকিসহ নানা অপরাধ শুরু হয়।

তাদের এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসে ফিলিপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নইমুদ্দিন সেন্টুর কাছে। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ ও সতর্ক করেছিলেন তিনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে টুকু বাহিনীর লোকজন পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ইউপি চেয়ারম্যান সেন্টুকে গুলি করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও আগে থেকেই আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জেরে তাদের বিরোধ ছিল।

ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদে সচিব রাশিদুল ইসলাম বলেন, সেন্টু চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদের অফিস কক্ষে বসে কাজ করছিলেন। আনুমানিক বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রথমে জানালা দিয়ে চেয়ারম্যানকে পেছন থেকে গুলি করা হয়। এরপর চেয়ারম্যানের কক্ষে ঢুকে আবারও গুলি করে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন।

নিহত চেয়ারম্যানের ছোট ভাই শিল্পপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কোনো হত্যাকাণ্ডকেই স্বাভাবিকভাবে দেখার সুযোগ নেই। কারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে তা এলাকার সবাই জানে। হত্যাকাণ্ড ঘটানোর ইন্ধন কারা দিয়েছে সেটাও এলাকার সবার জানা। আমি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে প্রকৃত হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, নিহতের ছেলে কাকন হোসেন বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় মঙ্গলবার বিকেলে এ মামলা করেন।

তবে মামলার তদন্তের স্বার্থে আর কোনো তথ্য গণমাধ্যমকে দিতে রাজি হননি তিনি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার দেখায়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী।

রাজু আহমেদ/এএমকে