বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সময় ঢাকার বাড্ডায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন ফরিদপুর সদরের মো. সিরাজুল ইসলাম বেপারী (২৯)। ওই ঘটনায় বাড্ডা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এখন মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন সিরাজুলের বাবা শফিকুল ইসলাম। গত ২৯ সেপ্টেম্বর তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবের বরাবর এ আবেদন করেন।

আবেদনে শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের অনেকেই আমার অত্যন্ত পরিচিত ও কাছের লোকজন। আমার ছেলে হত্যার সঙ্গে কোনোভাবে তারা জড়িত নন। আমি আমার ছেলের প্রকৃত হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করব। আমি বাড্ডা থানায় এ বিষয়ে দায়ের করা মামলাটি (মামলা নম্বর- ১, ১ সেপ্টেম্বর ৩০২/১৪৯/৩৪) প্রত্যাহার করে আসামিদের ওই মামলার দায় হতে অব্যাহতি প্রদান করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

বাড্ডায় নিহত সিরাজুল বেপারীর বাবা শফিকুল ইসলাম গত ২৩ সেপ্টেম্বর নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিশেষ আমমোক্তারনামা বাতিল এবং দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের হলফনামায় বলেন, ‘আমার ছেলে সিরাজুল নিহতের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার বাদী হাসিবুল হাসান লাবলু আমার কোনো আত্মীয় নন এবং পূর্বপরিচিতও নন। আমি ইতোপূর্বে তাকে কখনও দেখিওনি। হাসিবুল হাসান লাবলু আগস্টের দিকে ১১৫ জনকে আসামি করে ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন নিরীহ লোক এবং অন্যান্য জেলার কিছু লোককে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। তাদের আসামি করে বাদী হাসিবুল হাসান লাবলু আমার ছেলের লাশ নিয়ে চাঁদাবাজি ও ব্যবসা শুরু করেছেন যা আমার কাছে অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। আমি আমার ছেলের মৃত্যু নিয়ে ব্যবসা বা চাঁদাবাজি অথবা নিরপরাধ লোকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে দিব না। যেহেতু আমার ছেলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে তাই আমি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের আসামি করে মামলা দায়ের করব।’

উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট ঢাকার বাড্ডা থানা আক্রমণের ঘটনা ঘটে। ওই সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন ফরিদপুর সদরের মো. সিরাজুল ইসলাম বেপারী (২৯)। ওই ঘটনায় ২৯ আগস্ট ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন ফরিদপুরের সালথার খলিশাডুবি গ্রামের হাসিবুল হাসান লাবলু নামের এক ব্যক্তি। হাসিবুল মামলার এজাহারে নিজেকে নিহত সিরাজুলের খালাতো ভাই হিসেবে দাবি করেন।

নিহত সিরাজুলের বাবা ফরিদপুর সদরের ডিক্রির চর ইউনিয়নের তায়জদ্দিন মুন্সীর ডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম।

হাসিবুল হাসান লাবলুর দায়ের করা ওই মামলায় ১১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৩০০ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। সেখানে ফরিদপুরের ৫৯ জনের নাম রয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- ফরিদপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র অমিতাভ বোস, ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান, জেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি কাজী আব্দুস সোবাহান, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব সত্যজিৎ মুখার্জি, ফরিদপুর পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিধান সাহা প্রমুখ।

সিরাজুলের বাবা শফিকুল ইসলামের অভিযোগ, মামলা দায়েরের পর বাদী হাসিবুল হাসান লাবলু ফরিদপুরের আসামিদের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মামলার আবেদনের কপি, ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশনামা, প্রাথমিক তথ্যবিবরণী পাঠিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। উদ্দেশ্য, তাদের কাছে মামলা থেকে নাম কাটানোর কথা বলে চাঁদাবাজি করা।

বাদী হাসিবুল হাসান লাবলু সালথার খলিশাডুবি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।

জহির হোসেন/পিএইচ