মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার মুহাম্মদিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসায় শ্রেণিকক্ষে ধূমপানের অপরাধে চার ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার করায় মাদরাসায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (২ অক্টোবর) দুপুরে বড়লেখা পৌর শহরের বড়লেখা মুহাম্মদিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসায় এ ঘটনা ঘটে। 

মাদরাসা সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি শ্রেণিকক্ষে বসে মাদরাসার চার শিক্ষার্থীর ধূমপানের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় মাদরাসা পরিচালনা কমিটি চার ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়। বহিষ্কার হওয়া চার শিক্ষার্থী ছাত্রদলের কর্মী হওয়ায় ১০-১৫ জনের একটি গ্রুপ নিয়ে উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আরিফুল ইসলাম মাদরাসায় যান। একপর্যায়ে মাদরাসার ছাত্রদের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে মাদরাসায় ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। 

হামলাকারী বহিরাগতরা হলেন- আরিফুল ইসলাম, শাহরিয়ার ফাহিম, আব্দুল কাদির পলাশ, সাকিব আফনান, সামিদ, আজাদ, জালাল প্রমুখ। 

মাদরাসার সহকারী অধ্যাপক আব্দুল কাদির বলেন, শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের জন্য কিছু ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়। সেই ঘটনায় কিছু লোক মাদরাসায় আসেন। তারা আসলে আমরা বলি অধ্যক্ষ জেলা শহরে গেছেন, তিনি আসলে বুঝা যাবে। এ ঘটনায় তারা মাদরাসার ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। কে কোন রাজনীতি করেন আমরা তো তাদের চিনি না। 

বড়লেখা উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা খবর পেয়েছি এখানে ছাত্রশিবির অবস্থান করে ফরম কাটাচ্ছে এবং কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। তাই আমরা এসেছিলাম। আসার পর তারা আমাদের ওপর হামলা চালালে আমরা পাল্টা হামলা করি। 

বড়লেখা উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাজু আহমদ বলেন, ধূমপান করায় শিক্ষার্থীদের অভিযোগে ৪ জনকে বহিষ্কার করে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কৃতরা ছাত্রদলের কর্মী হওয়ায় উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব বিষয়টি নিয়ে মাদরাসায় এসে শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। ছাত্র সংসদের ভিপি আব্দুর রহমান এবাদ এটার প্রতিবাদ করলে তার সাথেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। পরে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলে তারা ভাংচুর চালায়। পরে শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধে ছাত্রদলের নেতারা পালিয়ে যায়। এখানে ছাত্রশিবিরের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।

বড়লেখা উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ফয়ছল আহমদ বলেন, একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। বহিরাগতরা মাদরাসায় এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে। ঘটনাটি শুনে আমরা মাদরাসায় যাই। সেখানে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ছিল। বিএনপি নেতারা বলেছেন তারা বিষয়টির উপযুক্ত সমাধান করে দেবেন। এরপর আমরা শিক্ষার্থীদের শান্ত করি। তবে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ যাদের বহিষ্কার করেছে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়নি। এ ঘটনায় ইন্ধনদাতা ছিলেন বিএনপি নেতা আব্দুল কাদির পলাশ।

দক্ষিণবাগ (উত্তর) ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল জব্বারু বলেন, আমরা ঘটনা শুনে সেখানে যাই। সেখানে ছাত্রদল আর ছাত্রশিবিরের ছেলেরা ছিল। সেখানে গিয়ে শুনেছি ধূমপানের বিষয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ছাত্রদল আর শিবিরের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ হয়। পরে দুই পক্ষ অবস্থান নিলে আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করি। সেখানে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ছিল। ফয়ছল ভাই আর আমি মিলে দুই পক্ষকে সরিয়ে দেই।

তিনি বলেন, আগামীকাল আমরা বসে দুই পক্ষের মধ্যে যে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে সেটা সমাধান করে দেব। সেখানে অধ্যক্ষ ও প্রশাসন থাকবে। 

বড়লেখা মুহাম্মদিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. আলিম উদ্দিন বলেন, যে ছাত্রগুলোকে বহিষ্কার করা হয়েছে তারা আগে থেকেই সমস্যা তৈরি করে আসছিল। তারা ক্লাসে বসে ধূমপান, ছাত্রী ও শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণও করেছিল। এজন্য তাদের বহিষ্কার করা হয়। আজ আমি ডিসি অফিসে ছিলাম। পরে শুনেছি ওই শিক্ষার্থীদের পক্ষ হয়ে বহিরাগতরা মাদরাসায় একটা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ তৈরি করে। দুই পক্ষের মধ্যে যে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে বিষয়টি সমাধান করা হবে।

এবিষয়ে বড়লেখা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে  আমরা ফোর্স পাঠাই। সেনা সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি সবার উপস্থিতিতে বড়লেখা উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ফয়ছল আহমদ ও বিএনপি নেতা আব্দুল জব্বার সামাধান করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ঘটনায় বহিরাগতদের পক্ষে ছিলেন আব্দুল কাদির পলাশ। বর্তমানে এখানে কোনো ঝামেলা নেই। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

আরএআর