অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ, বেতন বৃদ্ধি, চাকরি স্থায়ীকরণ, উৎসব ভাতা, মাতৃত্বকালীন ছুটি, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, কোনো কর্মী মারা গেলে ন্যূনতম পাঁচ লাখ টাকা প্রদানসহ বিভিন্ন দাবিতে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের (কুসিক) মাস্টাররোলের (এমআর) কর্মচারীরা আন্দোলন করেছেন।

দাবি আদায়ের জন্য তারা কাজ ফেলে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী (যুগ্ম সচিব) মো. ছামছুল আলমকে অবরুদ্ধ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা প্রধান নির্বাহীর কক্ষে তালাসহ নগর ভবনের প্রবেশ ও বাহিরের পথে তালা ঝুলিয়ে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকেন।

বুধবার (২ অক্টোবর) দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত আন্দোলনরত কর্মীরা একজোট হয়ে বিক্ষোভ করেন। তবে এ সময় সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক সাইফ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন না।

এদিকে, সিটি কর্পোরেশনের অফিস সহকারী মাহাবুবুর রহমান নামের এক কর্মীকে লাঞ্ছিত করেছেন আন্দোলনকারীরা। মাহাবুবুর রহমান প্রধান নির্বাহীর কক্ষে দায়িত্ব পালন করেন। আন্দোলনকারীরা কক্ষে প্রবেশ করতে চাইলে বাধা দেন মাহাবুব, এতে উত্তেজিত কর্মীরা তাকে লাঞ্ছিত করেন।

আন্দোলনরত কর্মীরা জানান, দৈনিক ৩৫০ টাকা হাজিরা ভিত্তিতে তারা দীর্ঘদিন কাজ করে যাচ্ছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এই টাকা দিয়ে কিছুই করতে পারেন না তারা। তাছাড়া মাসের ৩০ দিন তাদের কাজ থাকে না, সেক্ষেত্রে মাসিক বেতন আরও কম হয়। অনেকে ছয় হাজার টাকা বেতন পান। এসব টাকায় তাদের সংসার চলে না।

পরিচ্ছন্নতাকর্মী মান্নান মিয়া বলেন, তিনি কুমিল্লা নগরীর চার নম্বর ওয়ার্ড কাপ্তান বাজার এলাকায় কাজ করেন। সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা ডিউটি করেন। পুরো মাস কাজ করে তিনি ৬ হাজার ৩০০ টাকা বেতন পান।

ময়লার গাড়িচালক মো. হানিফ মিয়া বলেন, ‘কোনো বোনাস নাই, দৈনিক ৩৫০ টাকা মজুরীতে ১০ হাজার ৫০০ টাকা হারে বেতন পাই। আবার যেদিন কাজ নাই, সেদিনের বেতন নাই। কোনো ছুটি নাই, ভাতা নাই। দীর্ঘদিন কাজ করছি, চাকরি স্থায়ীকরণ নাই।’

ঝাড়ুদার ফাতেমা বেগম জানান, তিনিও সাড়ে ছয় হাজার টাকা বেতন পান, এ টাকায় তার সংসার চলে না।

জানা যায়, তিন বছর আগে মাস্টাররোল কর্মচারীদের বেতন দৈনিক ৩০০ টাকা হাজিরাভিত্তিক ছিল। সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু শেষ কর্মদিবসে তাদের দাবির প্রেক্ষিতে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৩৫০ করে যান। এরপর থেকে তারা বেতন বাড়ানোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছেন। বর্তমান প্রধান নির্বাহী যোগদান করার পর তারা বিভিন্ন সময়ে অসংখ্যবার দাবি আদায়ের জন্য আবেদন করেছেন। প্রধান নির্বাহী তাদের আশ্বাস দিলেও কোনো দাবি পূরণ করতে পারেননি।

তারা বলছেন, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তাদের, সেজন্য আন্দোলন শুরু করেছেন। দাবি মানা না হলে কর্মবিরতি চলবে। আন্দোলন আরও কঠোর হবে, পুরো সিটি কর্পোরেশন কার্যালয় অচল করে দেওয়া হবে।

এদিকে, পরিস্থিতি শান্ত করতে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম শুরুতেই কাজ করতে দেখা যায়। তবে অবস্থা বেগতিক হলে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

এ বিষয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী (যুগ্ম সচিব) মো. ছামছুল আলম বলেন, তাদের দাবি অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। বেতন বৃদ্ধি নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে।

তবে এ বিষয়ে জানতে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক সাইফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না।

আরিফ আজগর/এমজেইউ