নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মেঘনা নদীতে এক নৌযান শ্রমিককে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করার ঘটনা ঘটেছে। নৌ চাঁদাবাজরা আব্দুল আলীম নামে ওই শ্রমিককে কুপিয়ে আহত করেন। ঘটনার পরে তাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (০২ অক্টোবর) সকালে উপজেলার কালাপাহাড়িয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এ নিয়ে গত দেড় মাসে অন্তত অর্ধশতাধিক শ্রমিক ও জাহাজের সুকানিকে পিটিয়ে এবং কুপিয়ে আহত করা হয়েছে বলে অভিযোগ শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের।

নৌযান মালিক ও শ্রমিকরা জানান, আড়াইহাজারে মেঘনা নদীতে বিভিন্ন নৌযানে অবাধে চাঁদাবাজি চলছে। এতে নৌযান মালিকসহ নৌপথের ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। নৌপথে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে নৌযান মালিকরা ইতোমধ্যে বিআইডব্লিউটিএ এর কাছে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট, কিশোরগঞ্জসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে পাথর, বালু, কয়লাসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী জাহাজ মেঘনা নদীর আড়াইহাজার উপজেলা হয়ে চলাচল করে। উপজেলার দয়াকান্দা-বিবির কান্দি এলাকা দিয়ে নুনেরটেক, বৈদ্যেরবাজার ও মেঘনা সেতু এলাকা হয়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করে সেসব নৌযান। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনের পরিচয়ে আড়াইহাজার অংশে ব্যাপক চাঁদাবাজি করছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। প্রতিবাদ করলে চাঁদাবাজরা তাদের মারধর করে নদীতে ফেলে দেন। এসব বিষয়ে প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি তারা।

অভিযোগ আছে, উপজেলার কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের ছাত্রদল নেতা রতন মিয়া, যুবদল নেতা ফুল মিয়া ও দুলাল মিয়াসহ ১৫-২০ জনের একদল চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট প্রতিদিন পৃথক পৃথক স্পিডবোটে করে চাঁদা তোলেন। নৌযানের ধরন অনুযায়ী চাঁদার হার নির্ধারণ করে চাঁদা নেওয়া হয়। নৌযান ভেদে ৫০০ থেকে শুরু করে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা নেন তারা। তবে ছাত্রদল নেতা রতন মিয়া, যুবদল নেতা ফুল মিয়া ও দুলাল মিয়া চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেছেন।

নৌযান শ্রমিক আব্দুর রহমান জানান, আমরা পাথর বোঝাই করে আসার সময় মেঘনা নদীর কালাপাহাড়িয়া এলাকায় পৌঁছালে আমাদের বাল্কহেড থেকে দুই হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। দাবিকৃত চাঁদা না দেওয়ায় আমাকেসহ বাল্কহেডের চালককে পিটিয়ে আহত করে আমাদের মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে যায় তারা।

আহত শ্রমিক আব্দুল আলিম জানান, গত পাঁচ তারিখের পরে মেঘনা নদীর কালাপাহাড়িয়া এলাকায় আমাদের ওপর জুলুম হয়ে গেছে। আমাদের ওপর অত্যাচার চালিয়ে মোবাইল ফোন, টাকা পয়সা সবকিছু ছিনিয়ে নেয় এই চাঁদাবাজরা। চাঁদা না দেওয়ায় আমাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে তারা। জানতে পেরেছি চাঁদাবাজরা আড়াইহাজার উপজেলার বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান সুমনের সমর্থক। আমরা চাঁদাবাজদের হাত থেকে বাঁচতে চাই।

জাহাজের সুকানি কুদরত মিয়া জানান, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিএনপির নামধারী কিছু সন্ত্রাসী আমাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করছে। তাদের দাবিকৃত চাঁদা না দিলে আমাদের মেরে ফেলার হুমকিসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়। আমাদের জীবনের মায়া ছেড়ে দিয়ে জাহাজ চালাতে হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

বাংলাদেশ জাহাজি শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সবুজ শিকদার জানান, গত দেড় মাসে আমাদের বিভিন্ন জাহাজ ও নৌযান শ্রমিকের কমপক্ষে অর্ধশতাধিক লোককে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে চাঁদাবাজরা। এ বিষয়ে নৌ পুলিশের পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হয়েছে। আমরা চাঁদাবাজদের হাত থেকে শ্রমিকদের রক্ষা করার জন্য বড় ধরনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।

খাগকান্দা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, নৌযানে চাঁদাবাজির বিষয়ে আমরা কয়েকবার মেঘনায় অভিযান চালিয়েছি। চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য আমরা টহলের ব্যবস্থা জোরদার করেছি।

আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদুর রহমান জানান, মেঘনা নদীতে বিভিন্ন নৌযানে চাঁদাবাজির বিষয়ে কেউ লিখিত বা মৌখিকভাবে অভিযোগ করলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা সহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, নৌপথে চাঁদাবাজদের বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। চাঁদাবাজদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।

এফআরএস