বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ফল বিক্রেতা মেরাজুল ইসলাম মেরাজ (৩৫) হত্যা মামলায় রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি নবী উল্লাহ পান্নার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

বুধবার (২ অক্টোবর) দুপুরে রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সোয়েবুর রহমান তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিন সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা নবী উল্লাহ পান্নাকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. বিজন চন্দ্র আসামির ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে মেরাজ হত্যা মামলায় নবী উল্লাহ পান্নার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। পুলিশ রিমান্ড শেষে আগামী ৬ অক্টোবর আসামিকে আদালতে হাজির করতে দিন ধার্য করা হয়।

এর আগে আজ বুধবার ভোররাতে রংপুর নগরীর কলেজ রোড খামারপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে দীর্ঘ দেড় মাস ধরে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ নেতা নবী উল্লাহ পান্নাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আরও একাধিক মামলা রয়েছে।

এ মামলার আইনজীবী শেখ মেজবাহুল মান্নান জানান, ১৯ জুলাই বিকেলে সিটি বাজার এলাকায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নির্বিচারে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালায়। এ সময় গুলিতে নিহত হন ফল বিক্রেতা মেরাজুল ইসলাম মেরাজ। ওই ঘটনায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। ওই মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা নবী উল্লাহ পান্নাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে দ্রুত বিচার আইনে এই মামলাটির নিষ্পত্তি দাবি করে তিনি বলেন, ওই মামলায় রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডলকে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল।

এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফল বিক্রেতা মেরাজুল ইসলাম মেরাজ নিহতের ঘটনায় দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। গত ২৫ আগস্ট নিহতের সহধর্মিণী নাজমিম ইসলাম বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এর আগে গত ১৮ আগস্ট মেরাজুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় তার মা আম্বিয়া বেগম বাদী হয়ে ২১ জনের নাম উল্লেখ করে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোতোয়ালি আমলি আদালতে আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিল সিটি কর্পোরেশনের ফুটওভার ব্রিজের কাছে আসে। এ সময় আসামিরা অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বেআইনিভাবে মিছিলে বাধা দেয়। মিছিলটি এগিয়ে যেতে থাকলে রংপুর পুলিশ সুপার সতর্ক না করে পুলিশের এপিসিতে উঠে গুলি ও ইটপাটকেল ছোঁড়ার নির্দেশ দেন। এ সময় আসামিরা তাদের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ও ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। একপর্যায়ে মেরাজুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

নিহত মেরাজুল ইসলাম মেরাজ নগরীর জুম্মাপাড়া এলাকার শামসুল হক-আম্বিয়া বেগম দম্পতির ছেলে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। মেরাজুল নগরীর সিটি বাজার এলাকায় ফল বিক্রি করতেন।

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ১৯ জুলাই মেরাজুল ইসলামের বিবাহবার্ষিকী ছিল। সেদিন দুপুরে মুরগি, পোলাওয়ের চাল ও আলু নিয়ে বাড়ি যান। বিকেলে কলার দোকানের মহাজনকে টাকা দিতে মিরাজুল বাড়ি থেকে সিটি বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। বিকেল ৫টার দিকে দোকানের কাছাকাছি পৌঁছালে আন্দোলনকারী ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যান। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন মেরাজুল। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার কিছুক্ষণের মধ্যে তার মৃত্যু হয়।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ