দরজায় কড়া নাড়ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এই মহোৎসবকে ঘিরে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এরই মধ্যে অধিকাংশ মণ্ডপে শেষ হয়েছে প্রতিমা নির্মাণকাজ। সরাদেশের মৃৎশিল্পীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শরীয়তপুরের শিল্পীদেরও এখন রঙ-তুলির আঁচড়ে সাজ-সজ্জা ও প্রতিমার সৌন্দর্য বর্ধণে ব্যস্ত সময় কাটছে। 

সনাতন পঞ্জিকার ষষ্ঠী তিথিতে কল্পারম্ভ বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়ে দশমীর পূজা শেষে প্রতিমার দর্পণ বিজর্সনের মাধ্যমে শেষ হবে শারদীয় দূর্গোৎসব।

সম্প্রতি শরীয়তপুরের বিভিন্ন উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সার্বজনীন দূর্গোৎসবের মণ্ডপসমূহে দেখা গেছে সাজ সাজ রব।

জেলার বিভিন্ন মণ্ডপ ঘুরে জানা গেছে, বরাবরের মতো এছরও শরীয়তপুরে শতাধিক মণ্ডপে উদযাপন করা হবে শারদীয় দূর্গোৎসব। বর্তমান সময়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিকট অজন্তা ধাঁচের প্রতিমার চাহিদা একটু বেশি। অজন্তা ধাঁচের প্রতিমাগুলো ওরিয়েন্টাল প্রতিমা হিসেবে বেশি পরিচিত। এ ধরনের প্রতিমার শাড়ি, অলংকার, সাজ-সজ্জার সব উপকরণ তৈরি হয় মাটি দিয়ে। কাদামাটি, বাঁশ, খড়, সুতলি দিয়ে মূর্তি নির্মাণের পরে সুনিপুণ হাতে রঙ-তুলির ছোঁয়ায় দেবীর প্রতিমাকে রাঙিয়ে তুলতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পীরা। বৃষ্টির কারণে প্রতিমা ও মণ্ডপ তৈরির কাজ একটু পিছিয়ে পড়ায় এখন যেন দম ফেলার একটুখানি সময়ও হাতে নেই তাদের। শারদীয় দূর্গোৎসবের জন্য নির্মিত জেলার ১০২টি মণ্ডপেই এ বছর অজান্তা ধাঁচের প্রতিমা তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীগণ।

 মৃৎশিল্পীরা জানান, প্রতিবছরই তারা অধীর আগ্রহে দেবী দূর্গার প্রতিমা তৈরির কাজের অপেক্ষায় থাকেন। শুধু জীবিকার জন্যই নয় বরং দেবী দূর্গার প্রতিমা তৈরির সঙ্গে এসব শিল্পীদের ধর্মীয় অনুভূতি, ভক্তি আর ভালোবাসা জড়িয়ে আছে।

সনাতন পঞ্জিকা অনুসারে ষষ্ঠী তিথির আগেই প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করতে হবে শিল্পীদের। চলতি মাসের ৯ অক্টোবর ষষ্ঠী তিথিতে ষষ্ঠ্যাদী কল্পরম্ভ বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস হবে দেবী দূর্গার। পরদিন সপ্তমী তিথিতে সপ্তমী বিহিত পূজা, এরপর পালাক্রমে অষ্টমী, সন্ধী পূজা, নবমী পূজার পরে দশমী শেষে প্রতিমার দর্পণ বিজর্সনের মাধ্যমে ১৩ অক্টোবর শেষ হবে শারদীয় দূর্গোৎসব।

নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর মণ্ডপে দীর্ঘ ৭ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করেন ঝিনাইদাহ জেলার দেবব্রত শর্মা। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বছর প্রতিমাসহ মণ্ডপটির কাজ সম্পন্ন করতে ৭০ থেকে ৭২ দিন লাগবে। পূজো শুরুর একদিন আগেই কাজ সম্পন্ন করতে পারব বলে আশা করছি। অল্প কয়েকদিন মাত্র বাকি আছে। এখন বেশ ব্যস্ততায় সময় কাটছে।

প্রতিমাশিল্পী বিধান কুমার আদি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক মাসের অধিক সময় ধরে ‍দুর্গা মায়ের প্রতিমার কাজ করছি। মূর্তি বানানোর কাজ শেষ। এখন রঙের কাজ শুরু করব। মায়ের নতুন রূপে আগমনী চিত্র ফুটিয়ে তুলেছি আমরা। মায়ের মহিষাসূর, মর্দিনী চিত্র সামনে ফুটিয়ে তুলছি। আমাদের টিমের পাঁচ সদস্যই চেষ্টা করছি পূজো শুরুর ২ দিন আগে কাজ সম্পন্ন করে মন্দির কমিটিকে বুঝিয়ে দেব।

অরূপ শর্মা নামে আরেকজন মৃৎশিল্পী ঢাকা পোস্টকে বলেন, মূর্তি তৈরির কাজ শেষ। এখন রঙের কাজ চলছে। প্রতিমাসহ মণ্ডপের সাজ-সজ্জার কাজ করেই ব্যস্ত সময় কাটছে আমার। পূজো শুরুর আগেই যেকোনো মূল্যে কাজ শেষ করতে হবে।

স্থানীয় অজয় দাস নামে একজন বলেন, শিল্পীরা মায়ের প্রতিমা নির্মাণ করছে। অবসর সময়ে দেখতে এসেছি। শিল্পীরা নিপুণভাবে মায়ের প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। বেশ ভালো লাগছে, সামনে আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব।

দল-মত, শ্রেণি-পেশা ও ছাত্র সমাজের সহযোগিতায় দূর্গোৎসব উদযাপন করা হবে জানিয়ে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ শরীয়তপুরের সভাপতি অমিত ঘটক চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বছর শরীয়তপুরে ১০২ মণ্ডপে শারদীয় দূর্গোৎসব উদযাপিত হবে। মণ্ডপের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী প্রত্যেক মণ্ডপে নিজস্ব সেচ্ছাসেবক নিয়োজিত থাকবে। সব মণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। উচ্চ শব্দে গান বাজানো এ বছর আমরা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছি। ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্য বজায় রেখে আরতী, ঢাক-ডোল বাজিয়ে পূজা উদযাপিত হবে। মণ্ডপের নিরাপত্তা আমাদের নিজেদের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন বাহিনী, রাজনৈতিক বিভিন্ন দল ও ছাত্র সমাজ নিশ্চিত করবে বলে আশা করছি।

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পূজা যেন নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণ ভাবে উদযাপন করা যায় সেজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপসমূহে আমাদের ফোর্স থাকবে। অন্যান্য মণ্ডপসমূহে আমাদের টহল টিম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।

সাইফ রুদাদ/আরকে