শিক্ষক পরিবারে জন্ম ও বেড়ে ওঠা নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কানিজ ফাতেমার। বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে একজন পেশাদার শিক্ষকের মতো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশে মজার সব গল্পের মাধ্যমে শুরু করেন পাঠদান। তাই সুযোগ পেলে ঢুকে পড়েন শ্রেণিকক্ষে। শিক্ষার্থীরাও মনোযোগ দিয়ে তার ক্লাস করেন।

মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) পরিদর্শনে গিয়ে ক্লাস নেন বজরা ইউনিয়নের বজরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। এ সময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অনুপ্রেরণা ও শিক্ষামূলক বক্তব্য রাখেন ইউএনও কানিজ ফাতেমা। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্কুলে পরিদর্শনে গিয়ে ক্লাস নিয়ে থাকেন।

জানা যায়,  স্কুল শিক্ষক বাবা মো. নজরুল ইসলাম খানের হাত ধরে বিদ্যালয়ে যেতেন সোনাইমুড়ী উপজেলার ইউএনও কানিজ ফাতেমা। নিজের শিক্ষা জীবন শেষ করে কর্মজীবনে এসেও বাবার হাত ধরে বিদ্যালয়ে যাওয়ার স্মৃতি মনে পড়ে তার। তাই প্রায়দিনই উপহার সামগ্রী নিয়ে বিদ্যালয়ে যান তিনি। তারপর শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অনুপ্রেরণা ও শিক্ষামূলক বক্তব্য রাখেন।

নয়াবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উম্মে আয়মান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউএনও স্যার যখন ক্লাসে ঢোকেন, তখন বুঝতেই পারিনি তিনি ইউএনও। আমাদের দীর্ঘক্ষণ পাঠদান করিয়েছেন তিনি। শিক্ষক হিসেবে স্যারকে পেয়ে আমরা আনন্দিত। তিনি আমাদের লেখাপড়া শিখে বড় হওয়ার উৎসাহ দিয়েছেন।

স্নেহা চ্যাটার্জী নামের আরেক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউএনও স্যার আমাদের বিদ্যালয়ে প্রায় আসেন। আমাদের বই, কাগজ ও শিক্ষা সামগ্রী উপহার দেন।  কখনো কখনো ক্রীড়া সামগ্রী উপহার দেন। ইউএনও স্যারকে আমাদের কাছে খুব ভালো লেগেছে। উনার সাথে আমাদের যে স্মৃতি রয়েছে তা সারাজীবন মনে থাকবে।

মো. আরিফ নামের এক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউএনও স্যার আমাদের ইংরেজি ক্লাস নিয়েছেন। ক্লাসে এসে স্যার আমাদের বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। সেই সঙ্গে কিভাবে পড়া মনে রাখতে হবে তার নিয়ম-কানুন শিখিয়ে দিয়েছেন। আমরা স্যারকে ভুলবো না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লাকী সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আকস্মিক নয় ইউএনও স্যার প্রায় স্কুলে এসে বিভিন্ন শিক্ষার্থীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তারপর তাদের লেখাপড়ার খোঁজ-খবর নেন। এরপর শিক্ষকদের সঙ্গে স্কুলের নানা বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেন। আমরা শিক্ষাবান্ধব এমন স্যারকে পেয়ে সবাই খুশি।

বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মাছউদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, একজন শিক্ষাবান্ধব ইউএনও পেয়ে আমরা খুবই আনন্দিত। যেমন ক্লাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের খবর নেন তেমন শিক্ষকদের খবরও নেন। এতে আমরা অনেক খুশি। 

ইউএনও কানিজ ফাতেমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াতে খুব আনন্দ পাই। আমার বাবা মো. নজরুল ইসলাম খান, আমার চাচা, আমার নানা, আমার শ্বশুর-শাশুড়িসহ পরিবারের প্রায় ১০ জন শিক্ষক। আমি নিজেও ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজে এক বছর শিক্ষকতা করেছি। আমি পাঠদান করাতে গেলে তাদের সাথে আলাপ হয়। এতে করে বিদ্যালয়ের সমস্যা এবং পড়াশোনার কোনো অসুবিধা হলে সহজেই জানা যায়। পরবর্তীতে তা সহজেই সমাধান করা যায়। 

তিনি আরও বলেন, শিক্ষা জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার মতো আনন্দ আর কিছুতে নেই। আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। তাদের মাঝে আমার স্বপ্ন গুলো দেখতে পাই। একদিন তারা বড় বড় অফিসার হবে। দেশ পরিচালনা করবে। বিশ্বজয় করবে। এক কথায় উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। যেখানেই থাকি শিক্ষার্থীদের সাথে আমার যোগাযোগ থাকবে। আমরা চাই স্বপ্নের সমান বড় হোক তারা।

হাসিব আল আমিন/আরকে