খাগড়াছড়িতে ফের পিটিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাহাড়ি ও বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) দুপুরের পর থেকে শহরজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন, বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। সন্ধ্যার পর জনশূন্য খাগড়াছড়ি শহরে বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি। চরম উৎকণ্ঠায় সময় যাচ্ছে সাধারণ মানুষের।

এদিকে ঘটনা উস্কে দিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাগড়াছড়ি শহরে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি ও আনসারের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন রয়েছে। পাশাপাশি টহল জোরদার করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি সদর সার্কেলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তৌফিকুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, খাগড়াছড়ি বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। মানুষজনকে বাজার থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। কেউ কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে।

এদিকে দুপুরের পর থেকেই শহরের চেঙ্গি স্কয়ার, মহাজন পাড়া, মগের চায়ের দোকান, মধুপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে মগের চায়ের দোকান এলাকায় সড়কে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।

অন্যদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৯ জন। আহতদের মধ্যে সদর সার্কেলের এএসপি, সদর থানর ওসিসহ ছয় পুলিশ সদস্যও রয়েছেন।

সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়াদের মধ্যে মো. নূর নবী (২০), রবিউল ইসলাম(২০), বাবলু (৩০), হোসাইন (৪০), মো. মোবারক হোসেন (২৬), মো. শাহীন (৩০) মিনহাজ (১৮) হাবিব (২৪), আকতার হোসেন (২৫), মো. রকি (২৫), সাব্বির (১৮), সাহেদ (২৫), রমজান হোসেন (১৯) মো. মান্নান (২৬), রমজান হোসেন (১৯) সেলিনা পারভিন (৫০), সোহেল রানা (৩৫), রবিউল হাসান (২৪), জিকো চাকমার (২৬) নাম জানা গেছে।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজন চন্দ্র রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনার সূত্রপাত টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক আবুল হাসানাত মুহাম্মদ সোহেল রানাকে নিয়ে। তার বিরুদ্ধে ৭ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা। দুপুরে দিকে উত্তেজিত কিছু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়টির ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করে অভিযুক্ত শিক্ষককে মারধর করে। খবর পেয়ে শিক্ষক সোহেল রানাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ইউএনও আরও বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। পরিস্থিতি পরিপূর্ণ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সদর উপজেলা এলাকায় ১৪৪ ধারা বলবত থাকবে।

সাইফ এন্টারপ্রাইজ মালিক মো. সমির হোসেন সুজন বলেন, খাগড়াছড়িতে সহিংস ঘটনায় এখানকার ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এখানকার ব্যবসা পর্যটন কেন্দ্রিক। সহিংস ঘটনা ঘটলে পর্যটক আসা বন্ধ হয়ে যায়। পর্যটক না আসলে আমাদের জন্য বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. আরিফ বলেন, ফের উত্তপ্ত হয়ে হয়ে উঠেছে খাগড়াছড়ি। বাসা থেকে বের হওয়াই এখন অনিরাপদ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হবে।

এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির নিউজিল্যান্ড এলাকায় একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দীঘিনালায় সহিংস ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটি জেলায় এ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এসব ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়।

মোহাম্মদ শাহজাহান/এসকেডি