মেহেরপুরের গাংনীর বাঁশবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই সহকারী শিক্ষককে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের মারধর, গালিগালাজ ও বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

প্রত্যাহার হওয়া দুই শিক্ষক হলেন, রুহিনা খাতুন, ও শাম্মীয়ারা দীপ্তি।

এর আগে মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে  অভিযোগ দেয় বিদ্যালয়ের অর্ধশত শিক্ষার্থী। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে  গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা সরেজমিন পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে দুই শিক্ষককে প্রত্যাহার করে অন্যত্র সংযুক্তির নির্দেশ দেন।

শিক্ষার্থীরা বলে, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাম্মিয়ারা দিপ্তি ও রুহিনা খাতুন কারণে অকারণে আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন, কান ধরে উঠবস করান। প্রতিদিনই মারধর করেন। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে অভিযোগ করেও কোনো উপকার পাওয়া যায়নি। উল্টো প্রধান শিক্ষক তাদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসমিম বলে, শাম্মিয়ারা দিপ্তি ম্যাডাম আমাকে কান ধরে টান দেন এবং ধাক্কা মেরে ফেলে দেন। এতে আমি পায়ে আঘাত পেয়েছি।

দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মুন্না বলে, ম্যাডাম আমাকে ডাস্টার দিয়ে মাথায় মেরেছেন।

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আছিয়া খাতুন বলে, ওই দুই ম্যাডাম ক্লাসে এসে আমার বাবা ও মায়ের সম্পর্কে বাজে কথা বলেন।

অভিভাবক রিপন আলী বলেন, মাঝে মধ্যেই আমার মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি যায়। পরের দিন আর স্কুলে আসতে চাইত না। মাঝে মধ্যে রাতে ঘুমের মধ্যেও মারছে মারছে বলে চিৎকার দিত। পরে জানতে পারি ওই দুই শিক্ষক তাকে মারধর করতেন।

প্রধান শিক্ষক মোছা. নুরুন্নাহার বলেন, আমি এর আগেও শিক্ষার্থীদের মারধর করা নিয়ে ওই দুই শিক্ষককে নিষেধ করেছিলাম। পরে তারা আমার সঙ্গেও মারমুখী আচরণ করেন।

গাংনী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাসিরুদ্দিন বলেন, এর আগে একবার ওই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল শিক্ষার্থীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকদের সতর্ক করা হয়েছিল।  আবারও তারা শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করায় প্রাথমিকভাবে তাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্ত করে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা বলেন, শিক্ষার্থীরা আমার কাছে এসেছিল অভিযোগ করতে। আমি শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শুনে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি।  তাই তাৎক্ষণিকভাবে দুই শিক্ষককে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক রুহিনা খাতুন বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের অংক ক্লাস নিই। বারবার বোঝানোর পরও তারা বোঝে না, হৈ চৈ করে। এ নিয়ে মাঝেমধ্যে তাদের বকা দিই। একটুআধটু বকা না দিলে শিশুরা বেয়াদবি করে। এটা নিয়ে ঝামেলা বেড়েছে।

ইংরেজি শিক্ষক শাম্মিয়ারা দিপ্তি বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। আমি অ্যাজমা রোগী। স্কুলে যেতে দেরি হয় এটা সত্য। তবে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া শেখাতে হলে বকা দিতে হয়, মারধর করতে হয়। এনিয়ে এত ষড়যন্ত্র হবে তা বুঝতে পারিনি। এখন সব শিক্ষক আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

আকতারুজ্জামান/এসকেডি