কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জেরে ইউপি চেয়ারম্যান নইমুদ্দিন সেন্টুকে গুলি করে প্রতিপক্ষের টুকু বাহিনীর লোকজন। এতে নিহত সেই চেয়ারম্যানের জানাজায় হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি দেখা যায়।

মঙ্গলবার (০১ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে ফিলিপনগর স্কুল মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি ছিল।

এর আগে, সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের সেই চেয়ারম্যানকে তার নিজ অফিস কক্ষে গুলি করে হত্যা করা হয়।

নিহত নইমুদ্দিন সেন্টু ফিলিপনগর বাজারপাড়ার মুতালিব সরকারের ছেলে। তিনি অনেক আগে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। একসময় উপজেলা বিএনপির সহসভাপতিও ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছেন। দুইবার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তার ভালো সখ্যতা ছিল।

নিহত সেন্টুর জানাজার সময় তার ছোট ভাই শিল্পপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কোনো হত্যাকাণ্ডকেই স্বাভাবিকভাবে দেখার সুযোগ নেই। কারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে তা এলাকার সবাই জানেন। হত্যাকাণ্ড ঘটানোর ইন্ধন কারা দিয়েছে সেটাও এলাকার সবার জানা। আমি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে প্রকৃত হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

সেন্টুর স্বজন, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তীব্র গণ-আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ফিলিপনগর এলাকায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে টুকু বাহিনী। টুকুর নেতৃত্বে ওই অঞ্চলে হাটঘাট দখল, লুটপাট, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র ব্যবসা, প্রতিপক্ষের লোকজনের ওপর হামলা, হুমকি-ধামকিসহ নানা অপরাধ শুরু হয়।

তাদের এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসে ফিলিপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নইমুদ্দিন সেন্টুর কাছে। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ ও সতর্ক করেছিলেন তিনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে টুকু বাহিনী পরিকল্পিতভাবে ইউপি চেয়ারম্যান সেন্টুকে গুলি করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর আগে থেকেই আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জেরে তাদের বিরোধ ছিল।

সোমবার এই হত্যাকাণ্ডের পর প্রতিপক্ষের লোকজন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। হত্যার পরবর্তী সহিংসতায় অভিযুক্তদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। চেয়ারম্যান অনুসারীরা হত্যার প্রতিবাদে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। হত্যাকাণ্ডের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে চেয়ারম্যান অনুসারী ও স্থানীয়রা বিক্ষুব্ধ হয়ে অভিযুক্ত তরিকুল ইসলাম টুকু, গিট্টু সোহাগ, হাবিবুর, হাসিনুর, রাসেল, রওশনসহ সাতজনের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।

ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদে সচিব রাশিদুল ইসলাম জানান, সেন্টু চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদের অফিস কক্ষে বসে কাজ করছিলেন। আনুমানিক বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রথমে জানালা দিয়ে চেয়ারম্যানকে পেছন থেকে গুলি করা হয়। এরপর চেয়ারম্যানের কক্ষে ঢুকে আবারও গুলি করে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন।

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান বলেন, চেয়ারম্যান নিজ কক্ষের চেয়ারেই বসে ছিলেন এমন সময় তাকে গুলি করা হয়েছে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা গেছেন। ময়নাতদন্ত শেষে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখনো মামলা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অপ্রীতিকর যে কোনো ঘটনা প্রতিরোধে পুলিশ কাজ করছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক।

রাজু আহমেদ/এফআরএস