কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমতে থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট থেকে পানি নেমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্তরা বাড়ি ফিরে গেছেন। কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে তিস্তা নদী তীরবর্তী রাজারহাট, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৫০টি গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যা কবলিত হয়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে দেড় হাজার পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঘরবাড়ি ও কাঁচা সড়ক। 

দিকে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র হয়ে উঠেছে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদের ভাঙন। প্রতিদিনই নদী ভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছে অসংখ্য পরিবার।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, আকস্মিক বন্যায় আমনসহ ৫০০ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোপা আমনের ক্ষতি কিছুটা কম হলেও, অন্যন্য ফসলের ক্ষতির শঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। 

এদিকে বন্যার পানি নামতে থাকায় ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রের বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, কমিউনিটি ক্লিনিক, হাট-বাজারসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। 

এরই মধ্যে গতকাল উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ব্যাপারীপাড়া এলাকার একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও একটি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ধরলা নদীতে বিলীন হয়েছে। এছাড়াও অসংখ্য ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। এমন ভাঙনে দিশাহারা হয়ে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ব্যাপারীপাড়া এলাকার শফিকুল ইসলাম বলেন, মাত্র দুই দিনে আমার এলাকার প্রায় ৫০-৬০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। আর যারা হুমকিতে আছে তারা বাড়িঘর সরিয়ে অন্য এলাকায় চলে যাচ্ছে। আমরা এখানকার মানুষ খুব কষ্টে আছি। 

একই এলাকার মো. নবীর ইসলাম বলেন, দুই দিনের ভাঙনে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও একটি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ও ৫০টি বাড়িঘর নদীতে চলে গেছে। এখানে এতো কিছু হওয়ার পরও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমরা খুব কষ্ট আছি। এখনো ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। আমার ইউনিয়নটা ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদ গিলে খাচ্ছে। 

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, দুধকুমার নদীর ৭টি পয়েন্টে বন্যার পানি সমতলে হ্রাস পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হচ্ছে। তবে ভাঙন রোধে সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা রক্ষায় কাজ করা হচ্ছে। 

জুয়েল রানা/আরএআর