‘হাত বদলে’ নদীতে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন, দুইজনের কারাদণ্ড
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর গড়াই নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছেই। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও ক্ষমতার হাতবদল হয়ে আবারও শুরু হয়েছে সেই অবৈধ বালু উত্তোলন।
নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অপরাধে দুই কিশোরকে ৫ দিন করে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। মঙ্গলবার (০১ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের লাহিনীপাড়ার সৈয়দ মাসুদ রুমী সেতু এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
বালু মহল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ৪ (খ) ধারায় আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিরুল আরাফাত। এ সময় তাকে সহযোগিতা করে কুমারখালী থানা পুলিশ।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের উত্তরপাড়া সাঁওতা গ্রামের মো. রঞ্জুর ছেলে মো. তুর্য (১৮) ও মো. হাবিলের ছেলে মো. জিন্নাহ শেখ (১৮)।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিরুল আরাফাত ঢাকা পোস্টকে বলেন, অবৈধভাবে গড়াই নদী থেকে বালু উত্তোলন করার অপরাধে বালু মহল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ৪ (খ) ধারায় দুইজনকে ৫ দিন করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। জনস্বার্থে উপজেলা প্রশাসনের এমন অভিযান অব্যাহত আছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুষ্টিয়ায় পদ্মা-গড়াই নদীতে বছরের পর বছর ধরে প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। ইজারা বন্ধ থাকলেও বালু উত্তোলন করা হয়। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেন। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হতো বছরের পর বছর ধরে। ইজারা বন্ধ থাকলেও কুষ্টিয়ায় পদ্মা-গড়াই নদীতে বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। এতে সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। গত ১০ বছরে সরকার অন্তত ২০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে বলে জানা গেছে।
জেলার ২১টি বালুমহাল থেকে দিনে অন্তত পাঁচ লাখ ঘনফুট মোটা বালু তোলা হতো। এসব বালু খুলনা ও বরিশাল বিভাগসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। ৫ আগস্টের পর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। অভিযোগ উঠেছে, নতুন করে বালুরঘাট ও নদী দখল করে বালু উত্তোলনের চেষ্টা করেছে বিএনপির নেতারাসহ প্রভাবশালীরা।
এর আগে, কুষ্টিয়ার মিরপুরে অবৈধভাবে বালুরঘাট দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। গত রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার তালবাড়িয়া ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের রানাখড়িয়া গ্রামের গোরস্তান বালুর ঘাটে এ ঘটনা ঘটে। এতে পাঁচজন আহত হন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পরই এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে আছেন কুষ্টিয়ার চার সংসদ সদস্যসহ জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা। তাদের সিংহভাগই হত্যা মামলার আসামি। এছাড়া আত্মগোপনে আছেন সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়রসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও দলীয় শীর্ষ পদধারীরা। বর্তমানে তাদের সম্পর্কে কেউ কোনো তথ্য দিতে পারছেন না। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারাই মূলত কুষ্টিয়ার বালুচক্র নিয়ন্ত্রণ করতেন। ৫ আগস্টের পর তারা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। এখন বিএনপির প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বালুমহালের সঙ্গে সংযুক্ত একাধিক সূত্র জানায়, দেশের প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই কুষ্টিয়ার বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কর্মযজ্ঞ চলছে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কুষ্টিয়ার প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বালু তোলার মহোৎসব চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷
এ বিষয়ে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কেউ অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব বা কোনো অপরাধ করলে দল তার দায় নেবে না। কেউ যদি অন্যায় অনিয়ম করে, তার দায় তাকেই নিতে হবে। বিএনপি কারো অপকর্মের বা অপরাধের দায় নেবে না।
কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোছা. শারমিন আখতার ও কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত আছে। যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
রাজু আহমেদ/এফআরএস