বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের দীর্ঘ ১৬ বছরের ভাড়া বকেয়া থাকায় কার্যালয়টিতে তালা লাগিয়ে দিয়েছে বরগুনা সদর উপজেলা প্রশাসন।

এছাড়া আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে ভাড়া পরিশোধ না করলে ভাড়ার চুক্তি বাতিল করা হবে উল্লেখ করে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে নোটিশ। ফলে যথাসময়ের মধ্যে বকেয়া ভাড়া পরিশোধ না করলে কার্যালয়বিহীন হয়ে পড়বে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগ।

গত রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলের দিকে সকল বকেয়া ভাড়া আদায় করার জন্য আওয়ামী লীগের জেলা কার্যালয়টি তালাবদ্ধ করে সদর উপজেলা প্রশাসন। 

উপজেলা প্রশাসন ও প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বরগুনা পৌরশহরের শের-ই বাংলা রোডস্থ ফার্মেসি পট্টি নামক এলাকায় ভাড়ার চুক্তিতে ৫৫২ স্কয়ার ফিট আয়তনের একটি জমিতে ঘর উত্তোলন করে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগ। পরে ওই ঘরটিকেই জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় হিসেবে পরিচালিত করা হয়। এছাড়া ভাড়ার চুক্তি অনুযায়ী জেলা পরিষদের সকল জমির ভাড়া প্রতি দুই বছর পরপর ২০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি করা হয়। তবে ২০০৯ সালের পর থেকে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় হিসেবে পরিচালিত ওই ঘরের কোনো ভাড়া পরিশোধ করা হয়নি। এতে হিসেব অনুযায়ী জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের দীর্ঘ ১৬ বছরে ভাড়া বকেয়া থাকায় ভাড়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আড়াই লাখ টাকারও বেশি। আর এ বকেয়া ভাড়া আদায় করতেই নোটিশ টানানোর পাশাপাশি তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি।

সরেজমিনে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ঘুরে দেখা যায়, মাত্র দুইমাস আগেও যে ঘরটিতে ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পদচারণা সে ঘরটিতে ঝুলছে তালা। এছাড়া কার্যালয়ের দুটি প্রবেশ মুখে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষরিত কাগজে লেখা নোটিশসহ টিনের বেড়ার সঙ্গে ভাড়া আদায়ের জন্য টানিয়ে দেওয়া হয়েছে লাল রংয়ের একটি বড় আকারের ব্যানার। 

ব্যানারে উল্লেখ করা হয়, এতদ্বারা উপজেলা পরিষদ, বরগুনা সদর, বরগুনা এর আওতাধীন সকল দোকানঘর ভাড়াটিয়াদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বরগুনা শের-ই বাংলা রোডস্থ ফার্মেসি পট্টিতে অবস্থিত উপজেলা পরিষদের নিজস্ব ভূমিতে নির্মিত ঘরগুলো শুধুমাত্র বাণিজ্যিক কার্যে ব্যবহারের অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট ভাড়াটিয়ার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া আরও উল্লেখ করা হয়, বকেয়া ঘরভাড়া আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে পরিশোধ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় আগামী ১ নভেম্বর হতে ঘরভাড়া বাতিল করা হবে।

জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের দীর্ঘদিন পর্যন্ত ভাড়া বকেয়া থাকার খবরে শহরজুড়ে আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হলেও এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি স্থানীয়রা। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের কারো কোনো বক্তব্য না পেলেও ভাড়া বকেয়ার বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য জানিয়েছেন জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন নেতাকর্মীর।

বরগুনা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক গোলাম রাসেল খোকন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাসা থেকে বের হয়ে আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে থেকে যখন যাচ্ছিলামাম তখন দেখি ওখানে লাল একটি ব্যানার টানানো। তারা ভাড়া দেয়নি। আসলে মুখে গণতন্ত্রের বুলি আর দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে উপজেলা পরিষদের জমির ভাড়া না দিয়ে গণতন্ত্রের কোন দিকটা প্রকাশ করতে চায় তা আমরা দেখেছি। 

জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জুআরা শিপু ঢাকা পোস্টকে বলেন, বরগুনায় আওয়ামী লীগের যে অফিস ছিল তা উপজেলা পরিষদের জমি। ওই জমিতে যে ঘরগুলো ছিল তা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ভাড়া দেওয়া হত। দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদি আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থেকে অবৈধভাবে ওই অফিস দখল করে ভাড়া না দিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে। 

জেলা যুবদলের দপ্তর সম্পাদক হুমায়ুন কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, কারণ আওয়ামী লীগ শুধু এখানে না সারা বাংলাদেশেই তারা সরকারি জমি নিজেদের মনে করে ভোগদখল করেছে। আমার মনে হয় ওই ভবনের ভাড়া তারা দেয়নি। একারণে ওই স্থানে যদি কোনো ভবন তৈরি হয় তা যেনো নাগরিক সুবিধার্থে ব্যবহার করা হয়। 

বরগুনা সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক তালিমুল ইসলাম পলাশ ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় হিসেবে আমরা জানি। ওই কার্যালয়ের ভাড়া তারা এক যুগের বেশি বকেয়া রেখেছে। যারা লুটপাট এবং দখলবাজির রাজনীতি করে তারা রাষ্ট্রের সব সম্পত্তি তাদের পৈতৃক সম্পত্তি মনে করে। সাবেক সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু উপজেলা পরিষদের ভেতরে পুকুর ভরাট করে সেখানে বাংলো বাড়ি স্থাপন করেছে। পুরো রাষ্ট্রের ও সাধারণ মানুষের সম্পত্তিকে নিজেদের মনে করে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছে। 

এ বিষয়ে বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদ প্রশাসক মো. শামীম মিঞা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বরগুনা বাজারে আমাদের ১৬টি ভিটি আছে এগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য ভাড়া দেওয়া থাকে। যেহেতু উপজেলা প্রশাসনের আয়ের উৎস এখন কমে যাচ্ছে একারণে নিয়ম অনুযায়ী আমাদের ভাড়াগুলো পুনরায় নির্ধারণ করা হচ্ছে। নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিবছর জুলাইয়ের এক তারিখ নির্ধারিত ভাড়ার ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়। তবে গত বছর ২০২৩ সালে আমরা ভাড়া বৃদ্ধি করিনি। এ বছরও আমরা ভাড়া বৃদ্ধি করতে পারিনি। কিন্তু যে দোকানগুলোর ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়নি এবং যাদের বকেয়া আছে তাদেরকে একটি নোটিশ দিয়েছি। এ সময় একটি বন্ধ প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেছে, পরে আমরা জানতে পারি প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বরগুনা জেলা শাখার নামে নেওয়া ছিল। পরে ওখানে সংশ্লিষ্ট কাউকে না পাওয়ায় সরকারি বিধি অনুযায়ী নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা যদি বকেয়া পরিশোধ করে এবং তাদের ভাড়া কার্যক্রম চালিয়ে নিতে চায় তাহলে পরবর্তী সময়ে উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবে।

বকেয়া ভাড়ার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ২০১২ সালের ২৭ আগস্ট ওই সময়ের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কর্নেল মো. আব্দুল খালেকের স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে দেখেছি ঘরগুলো ভাড়া এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ অফিসের ভাড়াও প্রতি মাসে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা ছিল এবং সে ভাড়া তখনও দেওয়া হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত আমরা তাদের ভাড়া দেওয়ার কোনো তথ্য পাইনি। বর্তমান সময়ে এখন পর্যন্ত আমরা হিসাব বের করতে না পারলেও প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী প্রায় ২ লাখ ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রায় ১৬ বছর ধরে আমাদের কাছে বকেয়া রয়েছে। এ বকেয়া থাকার কারণেই আরও বেশ কয়েকটি দোকানকে আমরা নোটিশ পাঠিয়েছি। বকেয়া ভাড়া পেলে উপজেলা পরিষদের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি। 

আব্দুল আলীম/আরকে