ভাঙাচোরা সড়ক জোড়াতালির কাজ করতে গিয়ে এখন যেন বিটুমিন ছোঁয়ানোর জায়গা নেই। তাই পিচের বদলে দেওয়া হয়েছে ইটের সলিং। যশোর থেকে উত্তরবঙ্গের সড়কপথে যাতায়াতের একমাত্র পথ যশোর-ঝিনাইদাহ মহাসড়কের চুড়ামনকাঠি বাজার অংশের গোটা সড়কটির চিত্র এমন।

একই অবস্থা যশোর-ঝিনাইদহ, যশোর-খুলনা ও যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের। এ তিনটি মহাসড়কের কয়েক কিলোমিটার খানাখন্দ আর ছোট বড় গর্তে ভরা। এসব সড়কে সৃষ্ট গর্তগুলো বন্ধ করা হয়েছে ইটের সলিং দিয়ে। বৃষ্টি হলেই ভেজা ইটের সলিং গাড়ির চাকায় লেগে গিয়ে ইটের আদলা ও খোয়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে পুরো সড়কে। খানাখন্দ ও ইটের আদলা, খোয়া ভর্তি এসব সড়কে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। অপরদিকে এসব সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনেরও যন্ত্রাংশের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। বিভিন্ন সময় সড়কগুলোতে সংস্কার কাজ করা হলেও দুর্ভোগের লাগাম টানতে পরেনি সড়ক বিভাগ।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে,  যশোর- খুলনা মহাসড়কে ১০ কিলোমিটার, যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের নাভারণ থেকে বগআচড়াঁ পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার, যশোর-ঝিনাদহ মহাসড়কের কালীগঞ্জ পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়কে এমন খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া যশোর ঢাকা মহাসড়কের মনিহার অংশে এক কিলোমিটার অংশের বেহাল দশা হয়েছে। এর মধ্যে যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়ক আলাদা প্রজেক্টের আওতায় ছয় লেনে উন্নতিকরণের কাজ চলছে।

মফিজুর রহমান নামে চুড়ামনকাঠি বাজারের এক মুদি দোকানি বলেন, গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের চুড়ামনকাঠি বাজার অংশের এই মহাসড়কের বেহাল দশা। বড় বড় খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছিল। বিভিন্ন সময় খোয়া ঢালাই দিয়ে মেরামত করা হলেও তা টেকসই হয়নি। সর্বশেষ কিছুদিন আগে গোটা বাজার অংশের সড়কে ইটের সলিং করে দেওয়া হয়েছে। এখন প্রতিনিয়ত এখানে ছোটবড় দুর্ঘটনা ঘটছে।

দেলোয়ার ফরাজি নামে এক সিএনজিচালক বলেন, মহাসড়কে খানাখন্দ যেমন দুর্ভোগ, তেমনি আরেক দুর্ভোগ হচ্ছে তাতে ইটের সলিং দেওয়া। এটা কোনো সমাধান না। এতে যাত্রীদেরও ভোগান্তি হয়। ইটের খোয়া আদলা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া সড়কে বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয় মোটরসাইকেল ও তিন চাকার যানবাহনগুলো।

শাহ্আলম নামে এক মোটরসাইকেল চালক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিগত দিনে এসব সড়ক সংস্কারের নামে টেন্ডারবাজি এবং দুর্নীতি হয়েছে। এ কারণে বিগত কয়েক বছর ধরে যশোরের বিভিন্ন মহাসড়কে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লেও তা মেরামত ও স্থায়ী সংস্কার করতে বার বার ব্যর্থ হয়েছে সড়ক বিভাগ।

রিফাত হোসেন নামে আরেক মোটরসাইকেলচালক বলেন, দু-দিন আগেও চুড়ামনকাঠি বাজারে ইটের সলিংয়ের ওপর একটি মোটরসাইকেল পিছলে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে। এমন দুর্ঘটনা অহরহ ঘটছে। মহাসড়কগুলোতে জায়গায় জায়গায় এমন ইটের সলিং আর খানাখন্দ দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানির মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বছর বর্ষায় যশোরের বিভিন্ন মহাসড়কগুলোতে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে যশোর-খুলনা, যশোর-ঝিনাইদাহ, যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের বেশ কিছু অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এগুলো জরুরি সংস্কারের উদ্যােগ নিয়ে থাকি। এ বছর যশোর-খুলনা মহাসড়কে আড়াই কিলোমিটার রাস্তার ঢালাই কাজের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া বিভিন্ন মহাসড়ক জরুরি সংস্কারের জন্য গত সেপ্টেম্বর মাসে ৭ কোটি টাকার চাহিদা ঊর্ধ্বতন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জরুরি সংস্কারের ক্ষেত্রে মহাসড়কগুলোতে ইটের কাজ করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বর্ষা মৌসুমে বিটুমেনের কাজ করা যায় না। এ সময় জনগণের দুর্ভোগ কমাতে আমরা সড়কগুলো জরুরিভাবে ইট দিয়ে প্রাথমিক সংস্কার কাজ করে থাকি।

এ্যান্টনি দাস অপু/এফআরএস