পটুয়াখালীর সদর উপজেলার ইটবাড়িয়া ইউনিয়নের একটি পাকা রাস্তার প্রায় এক কিলোমিটার অংশ তুলে লুট করে নিয়ে গেছে স্থানীয় মানুষ। ইউনিয়নের ধনখালী বাজারের কাছে বেড়িবাঁধের ওপর রাস্তাটি অবস্থিত।

সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোদাল, বস্তা, ঝুঁড়িতে করে রাস্তার মালামাল তুলে সেগুলো নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। ওই সময় প্রতিবেদককে দেখে এগুলো ফেলে পালিয়ে যান তারা। শুধু রাস্তা লুট নয়, বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বন বিভাগের মালিকানাধীন সরকারি গাছও।

স্থানীয়দের দাবি, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পাকা রাস্তার ওপর মাটি দিয়ে রাস্তা উঁচু করার কারণে রাস্তাটি মাটির নিচে চলে যাচ্ছিল। যেহেতু মাটির নিচে চলে যাচ্ছিল তাই তারা রাস্তা খুঁড়ে সেটির মালামাল নিয়ে যাচ্ছেন।

অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় ইউপি সদস্য মিলন খানের নির্দেশে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রায় এক কিলোমিটারের এই রাস্তার মালামাল লুট করেছেন স্থানীয়রা।

এমন ঘটনার জন্য সরকারি সংস্থাগুলোর দায়িত্বে অবহেলা ও সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছে সুশীল সমাজ। যার ফলে সরকারের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউনিয়নের ধনখালী ও কালিচান্না গ্রামের ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষের স্বার্থে পায়রা নদীর পাড়ে গ্রাম প্রতিরক্ষা বাঁধ (বেড়িবাঁধ) নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। জনগুরুত্বের কথা বিবেচনায় কয়েক বছর আগে আট কিলোমিটারের বেশি পাকা সড়ক নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। রাস্তার পাশেই আছে বন বিভাগের মালিকানাধীন সরকারি গাছ।

সাম্প্রতিক সময়ে বেড়িবাঁধের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সংস্কারের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাথে সমন্বয় না করায় এই বিপত্তি ঘটে।

সমন্বয়হীনতার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পাকা রাস্তার ওপরে এক্সেভেটর দিয়ে মাটি ফেলতে শুরু করে। পাকা রাস্তা মাটির নিচে পড়ায় এর সুযোগ নেন স্থানীয়রা। এলজিইডির নির্মাণ করা প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা লুট করে নেওয়ার পাশাপাশি তারা বিক্রি করে দিয়েছে বন বিভাগের গাছ।

রাস্তার পাশের গাছ কাটার নেতৃত্ব দেওয়া কালাম আকন জানান তিনি গাছের ব্যবসা করেন। গাছ কাটার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভ্যাকু দিয়ে রাস্তা বাঁন্দে। তাই সবাই দাগের মাথার গাছ বিক্রি কইরা দেছে। এহন খায়গো বাড়ির গাছ কাটতেছি তাদের কাছ থেকে ৬ হাজার ৬০০ টাকা দিয় গাছ কিনছি।’

কী কী গাছ কিনছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘মেহগুনি, ঝাউ এবং ছৈলা গাছ।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিলন খান অভিযোগের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি তাদের এসব নিতে বলি নাই। আমি আরও তাদের নিষেধ করছি, তারা আমার কথা শোনে না। আর রাস্তাটি মাটির নিচে পড়ে যাওয়ার কারণে আমিও খুব একটা গুরুত্ব দেই নাই।

এলজিইডি পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হোসেন আলী মীর বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড যে বেড়িবাঁধ উঁচু করবে সে বিষয়ে আমাদের অবগত করেনি। তারা তাদের মতো করে কাজ শুরু করছে। আমরা বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে লোক পাঠিয়েছি। যাতে আর কেউ রাস্তার মালামাল নিয়ে যেতে না পারে।

তিনি আরও বলেন, এগুলো আপাতত সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের কাজ শেষ করার পর এগুলো আবার বিছিয়ে দেওয়া যায়। তাহলে জনগণের চলাচলে কিছুটা স্বস্তি মিলবে। কারণ এই রাস্তা যেহেতু একবার পাকা দেখানো হইছে তাই নতুন করে আবার করা সম্ভব না। বর্তমানে এক কিলোমিটার নতুন রাস্তা করতে প্রায় এক কোটি টাকা খরচ হয়। 

কাজে সমন্বয়হীনতার কথা স্বীকার করে পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) মো. আরিফ হোসেন বলেন, আমাদের বেড়িবাঁধের ওপর এলজিইডি যখন রাস্তা করছে তখন তারা আমাদের সাথে আলোচনা করে করেনি। আমরাও তাদের সাথে যোগাযোগ করিনি। তবে এই ঘটনার পর আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করেছি।

এদিকে পটুয়াখালী বিভাগীয় বন বিভাগের উপ বন সংরক্ষক মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড যে এ ধরনের মেরামতের কাজ করছে আমরা সেটা জানি না। আর আমাদের গাছ যদি কেউ অবৈধভাবে কেটে থাকে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে।

এমটিআই