ডেঙ্গু প্রতিরোধে কর্মসূচি হিসেবে স্কুলের চারপাশ ও মাঠ পরিষ্কার করার কথা ছিল। কিন্তু সেটি না করে ব্যবহার যোগ্য পুরাতন আসবাবপত্র গোপনে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, গোপনে বিক্রি করা স্কুলের মালামালের মধ্যে আছে প্লাস্টিক পিভিসি সিলিং ৪৫১ কেজি, হাউ প্লাস্টিক পিভিসি ১১৮ কেজি, প্লাস্টিক চেয়ার ২২৮ কেজি, কার্টুন ৩৭০ কেজি, কাগজ ১৮৭ কেজি, ফ্যান ১৭টি, ফোম চেয়ার ১৮টি, লোহার রড ১৯৯ কেজি, অ্যাঙ্গেল ১৩১ কেজি ও টিন ৩৮৭ কেজি। আর এসব মালামালের মূল্যে ধরা হয়েছে মাত্র ৬৯ হাজার ৫০১ টাকা।

সূত্র জানায়, কাগজ কলমে প্রধান শিক্ষক উল্লিখিত দর দেখালেও বাস্তবে ব্যবহার যোগ্য পুরাতন এসব মালামাল বিক্রি করেছেন আড়াই লক্ষাধিক টাকায়। এসব মালামালের কিছু অংশ পিস হিসেবে বিক্রি করা হলেও দেখানো হয়েছে কেজি দরে বিক্রির মূল্য। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কর্তৃপক্ষের (স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক) বৈধ অনুমতি ছাড়াই এসব পুরাতন মালামাল নিলাম বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে বিক্রি করা হয়। এর মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। আর তার এই অবৈধ কাজে সহযোগিতা করেছে স্কুলের আরও কিছু শিক্ষক।

একটি সূত্র জানায়, বিক্রীত এসব মালামালের মধ্যে ৩০০টি ভালো প্লাস্টিকের চেয়ার ছিল। সেগুলোও বিক্রি দেখানো হয়েছে ৪৫ টাকা কেজি দরে। আর ১৮টি ফোমের চেয়ার বিক্রি মূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ১০০ টাকা পিস করে। এছাড়াও ১৭টি সিলিং ফ্যানের মূল্য ধরা হয়েছে ৩৫০ টাকা প্রতি পিস হিসেবে। অন্যান্য মালামালের মূল্যও কম দেখানো হয়েছে। এছাড়া আরও কিছু মালামাল তালিকা ছাড়াই বিক্রি করা হয়। 

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজবাড়ী শহরের পৌর ইংলিশ সুপার মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ডের দুইটি ভাঙারির দোকানে গিয়ে বিক্রি হওয়া এসব মালামাল দেখা গেছে। দোকান দুটির মালিকের মধ্যে উজ্জ্বল খান নামে একজন জানান, মালামালগুলো রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে হুমায়ন নামে এক ব্যক্তি ক্রয় করেছেন। কীভাবে ক্রয় করেছেন তা জানা নেই।

এদিকে সাংবাদিকরা সেই ভাঙারির দোকানে গিয়ে ছবি ও ভিডিও করার পর একটি ভ্যানে করে প্লাস্টিকের চেয়ারগুলো অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক এক ব্যক্তি বলেন, গত ২৬ সেপ্টেম্বর বৃষ্টির মধ্যে তড়িঘড়ি করে প্লাস্টিকের চেয়ার ও পিভিসি সিলিংগুলো স্কুল থেকে ভ্যানে করে ভাঙারির দোকানে আনা হয়।

এ ঘটনার বিষয়ে রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ঢাকাসহ দেশের প্রায় জেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে মাঠ পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু বিস্তার রোধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা এসেছে। এ কারণে ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশার উৎপত্তিস্থল বিবেচনায় এসব মালামাল বিক্রি করা হয়েছে। বিক্রীত মালামালের পুরো টাকা এখনো হাতে পাইনি। পুরো টাকা হাতে পেলে সরকারি ট্রেজারে জমা দেওয়া হবে।

তবে এ সময় স্কুলের চারপাশ অপরিষ্কার ও মাঠে অনেক আগাছা দেখা যায়। এগুলো পরিষ্কার করা হয়নি কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ঘাস কাটা মেশিন মেরামত করতে দেওয়া হয়েছে তাই সেগুলো পরিষ্কার করা হয়নি।

রাজবাড়ীর ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। কেউ যদি নিয়ম বহির্ভূতভাবে সরকারি মালামাল বিক্রি করে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/এফআরএস