পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়নে পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন চলছেই। আলোচিত এই বালুমহালের নিয়ন্ত্রণ‌ নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিবিদ্ধসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ অস্ত্রসহ তাদেরকে আটক করেছে। রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ভাঁড়ারা ইউনিয়নের চরকণ্ঠগজরা এলাকার পদ্মা নদী থেকে তাদের আটক করা হয়। এ নিয়ে পাবনা ও কুষ্টিয়ার বালুখেকোদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। 

আটককৃতরা হলেন- সুজানগর উপজেলার চর সুজানগরের মৃত জলিল শেখের ছেলে আলতাফ শেখ (৩০), মজিদ শেখের ছেলে জয়নাল শেখ (২৮), আব্দুল বাতেনের ছেলে  রিপন শেখ (২৬),  বাদশা শেখের ছেলে মোস্তফা শেখ (২৮), চর ভবানীপুর এলাকার বাবুল শেখের ছেলে হৃদয় শেখ (২২), শহীদ শেখের ছেলে রাকিব শেখ (২৫), সদর উপজেলার ভাঁড়ারার শ্রীপুর এলাকার আব্দুল জলিল শেখের ছেলে আবুল হাসেম (৩৬), চক ভাঁড়ারার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে ঈসমাইল হোসেন (৬০) এবং লবু জোয়াদ্দার শেখের ছেলে সুরুজ জোয়াদ্দার (৩৬)। এর মধ্যে রাকিব গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আর সুরুজ জোয়াদ্দার গত ৪ আগস্ট পাবনা শহরে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার মামলার আসামি।

তবে বালুমহালের সঙ্গে সংযুক্ত একাধিক সূত্র জানায়, দেশের প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই বালু উত্তোলনের কর্মযজ্ঞ চলছিল। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পাবনা, রাজবাড়ী ও কুষ্টিয়ার প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বালু তোলার মহোৎসব চলছিল। গত ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বরে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর কয়েক দিন বালু তোলা বন্ধ ছিল। কিন্তু আবারও কুষ্টিয়ার কুমারখালীর আব্দুল আলিম, নয়ন, তোফাজ্জল, বকুলের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট বালু উত্তোলন শুরু করে। এবার পাবনা ও রাজবাড়ীর অংশের সবাইকে বাদ দেওয়া হয়। এনিয়ে চলছিল উত্তেজনা। আজকে পার্শ্ববর্তী রাজবাড়ী জেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খানের হয়ে সুরুজ ও ঈসমাইলের নেতৃত্বে বালু মহালের নিয়ন্ত্রণ নিতে যান তারা। এ সময় দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি হয়। একপর্যায়ে পাবনার ১০ জনকে বেধড়ক পিটিয়ে বেঁধে রেখে সদর থানায় খবর দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে বাহাদুরপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান বলেন, আমার পার্শ্ববর্তী এলাকা হলেও কিছু জানি না। আমি তাদেরকে চিনিই না, তারা পাবনার লোক। আমি নিজেই বালু উত্তোলনের বিপক্ষে। আমরা মানুষের জমিজমা রক্ষা করতে এবং বালু উত্তোলন বন্ধ করতে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছি। 

এ বিষয়ে জানতে কুষ্টিয়া-৪ আসনের সাবেক এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের সহযোগী আব্দুল আলিমের মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। 

পাবনা সদর থানা পুলিশের ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আব্দুস সালাম বলেন, খবর পেয়ে আমরা সেখান গিয়ে আহতবস্থায় ১০ জনকে আটক করেছি। ভাঙাচোড়া দুটি অস্ত্র উদ্ধার করেছি। তাদের মধ্যে তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত বলা যাবে।

এ বিষয়ে পাবনার নাজিরগঞ্জ নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইদুর রহমান বলেন, আমরা বালুমহালের ১৪ জনকে সাজা দিয়েছি। তারপরও কারা তুলছে জানি না। আজকে তো আমরা কিছু পাইনি। আমরা যদি বালুমহালের সঙ্গে জড়িত থাকতাম তাহলে ১৪ জনকে সাজা দিয়েছি কীভাবে? এখন বালু উত্তোলন হয় না।

রাকিব হাসনাত/আরএআর