চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের ৯ নম্বর গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৮তম জন্মদিন পালন উপলক্ষ্যে মিলাদ ও কেককাটা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নয়াহাট বাজারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের চারজন আহত হয়েছে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।

এর আগে, শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনকে কেন্দ্র করে ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকারের নেতৃতে স্থানীয় কয়েকটি মসজিদে দোয়া ও নয়াহাট বাজারে কেককাটার আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা বিএনপি নেতাদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এরপর রাতেই উত্তপ্ত হতে থাকে পরিস্থিতি।

পরে রাত সাড়ে ৮টায় নয়াহাট বাজারে ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি পুতুল সরকারের ওপর স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা হামলা চালান। কিছু সময় পর পাল্টা হামলা চালিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মারধর করা হয়। এ হামলার ঘটনায় স্থানীয় ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব ইমান হোসেন গাজী, পৌর সেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সদস্য সচিব সবুর পাটওয়ারী রুবেল এবং বিএনপি সমর্থিত বৃদ্ধ বিল্লাল হোসেন গাজী হামলার শিকার হন। আহতরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নেন।

এ ঘটনায় নয়াহাট বাজারের ব্যবসায়ী ও পথচারীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বাড়িতে চলে যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে যানবাহনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

পরে আজ রোববার বিকেলে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন কালুর সভাপতিত্বে চির্কা চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক শরীফ মোহাম্মদ ইউনুছ।

প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, অতীতের সব ধরনের মামলা-হামলা-হয়রানি ভুলে তাদের ক্ষমা করে দিয়ে আমরা চেয়েছিলাম শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে। গতকাল স্বৈরাচারের দোসররা যে ঘটনা ঘটিয়েছে, এরপর তাদের আর ছাড় নয়। আজকের পর থেকে সামনের দিনগুলোতে তাদের আর ছাড় দেওয়া হবে না। স্বৈরাচার হাসিনার দোসরদের প্রতিটি অন্যায়ের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।

প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক মজিবুর রহমান দুলাল, মাসুদ বেপারী, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আরিফ পাটওয়ারী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব ফারুক হোসেন, উপজেলা যুবদলের সভাপতি আমজাদ হোসেন শিপন, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম নান্টু, পৌর যুবদলের সভাপতি ইমাম হোসেন পাটওয়ারী, সাধারণ সম্পাদক আমিন মিজি, উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি মেহেদী হাসান মঞ্জু, পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক আল আমিন মোল্লাসহ অন্যান্যরা। প্রতিবাদ মিছিলে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকার বলেন, আমরা নেত্রী শেখ হাসিনার ৭৮তম জন্মদিন পালন করি। জন্মদিন পালনের ছবি, ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পাড়লে দুর্বৃত্তরা আমাদের নেতাকর্মী এবং বাড়িতে হামলা চালায়।

ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হানিফ সরকার বলেন, নয়াহাট এলাকায় দুই গ্রুপের মারামারির ঘটনায় কোনো অভিযোগ পাইনি। এ ঘটনায় আজ উপজেলা বিএনপি প্রতিবাদ সভা করেছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

আনোয়ারুল হক/কেএ