বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও এখনো সংকট কাটেনি। দ্রুত প্রশাসনের সব ইউনিটকে সংস্কার করে দেশকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের উপযোগী করতে হবে।

শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গাজীপুরের কাপাসিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রয়াত জাতীয় নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ’র ৮ম মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নির্বাচনের নিরপেক্ষ পরিবেশ তৈরি ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি।

মির্জা ফখরুল বলেন, গেল ১৭ বছরের বিএনপির প্রায় এক হাজার লোককে গুম করে হত্যা করা হয়েছে। ৬০ লাখ মানুষের ওপর মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের অত্যাচারে বিএনপি নেতারা ঘুমাতে পারতো না। এখনো আওয়ামী লীগ বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করছে। সামনে দুর্গাপূজা আসছে, এই দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে পারে।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ্যে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা বলতে চাই, আপনারা বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা সব সময় আপনাদের পাশে আছি। বাংলাদেশের সকল মানুষ আপনাদের পাশে দাঁড়াবে এবং আপনাদের পূজায় যেন সমস্যা না হয় সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকবে।

হান্নান শাহ্’র স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, বিগত দিনে আপনারা যেভাবে হান্নান শাহর পাশে ছিলেন আগামীতেও তার সুযোগ্য ছেলে রিয়াজুল হান্নানের পাশে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

মির্জা ফখরুল বলেন, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সরকারের লোকজন সবাই ভালো মানুষ। এ সরকার সংস্কার চায় এবং আমরাও সংস্কারে বিশ্বাসী। তাই বলে সংস্কারের নামে বেশি সময়ক্ষেপণ করা যাবে না। তাছাড়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশকে ফিরিয়ে দিতে দেরি হলে অন্য কোনো ব্যবস্থা যেন ঢুকে না পড়ে সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, তারেক জিয়ার নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে ইতোমধ্যে তালবাহানা শুরু হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করে তারেক জিয়াকে দেশে আসার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি দেশের সকল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দেওয়া মামলাও অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। কারণ এ সকল মামলাগুলো প্রত্যাহার করা না হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে না।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, বর্তমানে আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছি। কিন্তু বিগত ১৭ বছর ধরে আমরা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ পেতাম না। আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশ ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত রাখতে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। শেখ হাসিনা ও তার দোসররা ভেবেছিল তারা আজীবন ক্ষমতায় থাকবে এবং দেশ-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলবে।

তিনি আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে দেশে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধান সংশোধন করে এ ব্যবস্থাকে বাতিল করে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংসের ব্যবস্থা করেছিল। তারা বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসাতে চেয়েছিল। কিন্তু ছাত্র-জনতার সুনামির তাণ্ডবে লুটপাট ও চুরির দায় নিয়ে তারা আজ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমানে যে সরকার এসেছে, এটা অন্তবর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের প্রধান নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ তাকে ভালোবাসে। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র বিশ্বাস করে। মানুষ বিশ্বাস করে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে একটি পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে। আর সেই পার্লামেন্টের মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হবে। তারাও কমিটেড। আমরা বিশ্বাস করি তাদের কথায়, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন।

জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে ও কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আজিজুল রহমান পেরার সঞ্চালনায় স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটু, নজরুল ইসলাম আজাদ, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা শেফাউল হক, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মজিবুর রহমান, ওমর ফারুক সাফিন, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মো. শওকত হোসেন সরকার, গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও মরহুম আ স ম হান্নান শাহর ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান প্রমুখ।

এর আগে বিকেল ৩টায় ক্বারী আব্দুস সাত্তারের কুরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়।

অনুষ্ঠানের আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ঘাগটিয়ায় হান্নান শাহ্’র কবর জিয়ারত করেন।

শিহাব খান/এমজেইউ