গাজীপুরের শ্রীপুরের বাঁশবাড়ি গ্রামে চোর সন্দেহে ঘুম থেকে তুলে যুবককে পেটানোর পর মৃত্যুর ঘটনায় বিএনপি নেতাসহ ৭ জনের নামে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন মন্ডল।

তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে নিহত যুবকের বাবা মো. নাছির বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় মামলার আবেদন করেন। মামলায় ৭ জনের নাম উল্লেখ করে ১০/১২জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে বলেও জানান ওসি।

মামলায় শৈলাট মেডিকেল মোড়ের মনির উদ্দিনের ছেলে কামরুল হাসান লিটন (৫০), একই গ্রামের মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে বাবুল মন্ডল (৪৫), মৃত টেপপাঞ্জু’র ছেলে শফিকুল ইসলাম (৩২), মৃত তাজুম আলীর ছেলে মো. জলিল (৬৫), তার ছেলে সোহাগ (৪০), মৃত মগার ছেলে ইউসুফ (৪০), মৃত সুমেস’র ছেলে ছাত্তার (৫৫)সহ অজ্ঞাতনামা ১০/১২জনের নাম উল্লেখ করা হয়। কামরুল হাসান লিটন উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।

নিহতের স্বজনরা জানান, গত ১৩ সেপ্টেম্বর নিজ বসতঘরে ঘুমিয়েছিলেন ইসরাফিল। সকাল ৭টার কিছু সময় পর, এলাকার সোহাগসহ কয়েকজন যুবক তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে স্থানীয় ব্যাপারী বাড়ি জামে মসজিদের চুরি যাওয়া ব্যাটারি সম্পর্কে জানতে চান। পরে তাকে নিয়ে যায় বাড়ির অদূরে শৈলাট পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। সেখানে নিয়েই তার হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। তারপর ইসরাফিলের ওপর চলে ব্যাটারি চুরির অপবাদে নির্যাতন। লোহার রড দিয়ে পায়ের পাতা থেকে শুরু করে পিঠ পর্যন্ত পেটানো হয়। পরে কোমরের নিচে গরম পানি ঢেলে দেয়। গরম পানিতে যুবকের দুই পায়ের পাতা থেকে কোমর পর্যন্ত ফোসকা পড়ে যায়। এমন অবস্থায় নির্যাতনকারীরা ইসরাফিলের বুকে, পেটে, পিঠে লাথি মারতে মারতে চোর পেটানোর উৎসব শুরু করে, করতে থাকেন উল্লাস। পুরো ঘটনায় নিহতের কোনো স্বজনদের কাছে যেতে দেয়নি। তারা কাছে যেতে চাইলে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি দিয়ে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর কামরুল হাসান লিটন, বাবুল মন্ডল, শফিকুল ইসলামের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন ইসরাফিলের বাবা। বৃহস্পতিবার রাতে শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

নিহতের বাবা নাসির উদ্দিন বলেন, বসতঘরে ঘুমিয়ে থাকা আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে শৈলাট পশ্চিম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে আমার ছেলেকে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী পেটায়। পেটানোতেও ক্ষান্ত হয়নি তারা, একপর্যায়ে চায়ের দোকান থেকে গরম পানি এনে আমার ছেলের ওপর ঢেলে দেয়। এতে কোমরের নিচ থেকে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফোসকা পড়ে যায়। এ সময় আমার ছেলে পানি পান করতে চেয়েছিল, তার জীবনটা ভিক্ষা চেয়েছিল, কিন্তু জীবন ভিক্ষা তো দূরের কথা তারা পানি পর্যন্ত খেতে দেয়নি। আমরা এত চেষ্টা করেছি তবুও নির্যাতনকারীদের মন গলাতে পারিনি। আমাদের দেখলে নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়।

নিহতের শতবর্ষী দাদি মহর জান অভিযোগ করে বলেন, আমার নাতিকে বাড়ি থেকে স্কুল মাঠে ডেকে নিয়ে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা নির্যাতন করে। আমি কতবার যাওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু ওরা (নির্যাতনকারীরা) আমাকে বারবারই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে।

এমএসএ