জামায়াত-শিবিরের ৪ নেতাকর্মীকে গুলি করে হত্যার ১১ বছর পর মামলা
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে জামায়াত-শিবিরের চার নেতাকর্মীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় বসুরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র আবদুল কাদের মির্জাসহ ১১২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে। মামলায় আরও ১০০/১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে রামপুর ইউনিয়নের নিহত সাইফুল ইসলামের বড় ভাই মো. আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৮ নম্বর আমলি আদালতে মামলাটি করেন।
বিজ্ঞাপন
মামলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র আবদুল কাদের মির্জাসহ ১১২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে কাদের মির্জার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছাড়াও তৎকালীন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান, থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শফিকুল ইসলামসহ ১৯ পুলিশকে আসামি করা হয়েছে।
আদালতের বিচারক মো. ইকবাল হোসেন অভিযোগটি আমলে নিয়ে এ ঘটনায় পূর্বে মামলা না হয়ে থাকলে নিয়মিত মামলা হিসেবে (এফআইআর) রেকর্ড করতে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার এজাহারে বাদী জানান, ২০১৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিকেলে মিথ্যা মামলায় জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরের প্রতিবাদে বসুরহাটে বিক্ষোভ মিছিল বের করে জামায়াত-শিবির। এতে আবদুল কাদের মির্জার নেতৃত্বে তার সহযোগীরা অস্ত্র হাতে মিছিলে হামলা চালায়। এতে কাদের মির্জা ও ইউপি চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন মিকনের গুলিতে বাদীর ভাই সাইফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে নিহত হন।
এছাড়া ছাত্রলীগ নেতা নাজিম উদ্দিন মুন্না ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের গুলিতে চরহাজারীর আবদুর রাজ্জাকের ছেলে আবদুল আজিজ রায়হান, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজম পাশা চৌধুরী রুমেল, কাদের মির্জার ভাগিনা ফখরুল ইসলাম রাহাত ও সাবেক কাউন্সিলর আবুল খায়েরের গুলিতে চরকাঁকড়ার আবুল কাশেমের ছেলে সাইফুল ইসলাম বাবুল মারা যান।
অন্যদিকে একই সময় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামানের নির্দেশে পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সফিকুল ইসলাম, এসআই শিশির কুমার, এএসআই উক্যসিং মারমার গুলিতে বসুরহাট পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুর রহমানের ছেলে মতিউর রহমান সজিব নিহত হন।
মামলায় সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের আরেক ছোট ভাই শাহাদাত হোসেনসহ অজ্ঞাত ১৫০ জন আসামি মিছিলকারী অন্তত ১০০ জন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীকে পিটিয়ে আহত করে।
মামলার বাদী মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, আমি এবং আমার ভাই সাইফুল ইসলাম জামায়াতের সক্রিয় কর্মী। আমরা ঘটনার সময় দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করি। এতে কাদের মির্জার নেতৃত্বে তার সহযোগী ও প্রশাসনের গুলিতে আমার ভাইসহ চারজন ঘটনাস্থলে মারা যান। ঘটনার পর আমরা এ হতয়ার বিচার চাইলেও আসামিদের প্রভাবশালী হওয়ায় কোনো বিচার পাইনি। এমনকি গত ১১ বছর ভুক্তভোগী নিহতদের পরিবারের লোকজন বাড়িঘরে থাকতে পারেনি। বর্তমানে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর স্বাধীন বাংলাদেশে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
বাদীর আইনজীবী ও জেলা বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট এবিএম জাকারিয়া ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, নিহত একজনের ভাই মো. আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৮ নম্বর আমলি আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। আদালতের বিচারক মো. ইকবাল হোসেন অভিযোগটি আমলে নিয়ে এ ঘটনায় পূর্বে মামলা না হয়ে থাকলে নিয়মিত মামলা হিসেবে (এফআইআর) রেকর্ড করতে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার ফাঁসির প্রতিবাদে ২০১৩ সালে ১৪ ডিসেম্বর বসুরহাট মডেল স্কুল এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। পরে মিছিলটি বসুরহাট থানা সংলগ্ন হাসপাতাল রোডের উপজেলা মসজিদের সামনে গেলে পুলিশ তাদের মিছিলে বাধা দেয়। এতে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের ওপর হামালা ও ইটপাটকেল ছুড়ে মারে। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করেতে প্রথমে লাঠিচার্জ ও পরে আত্মরক্ষার্থে রাবার বুলেট ছোড়ে। শিবিরের কয়েকজন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হলে দুই পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় শুরু হয়। এতে ঘটনাস্থলে দুই শিবির কর্মী নিহত এবং ৩ পুলিশ কনস্টেবল গুলিবিদ্ধ হয়।
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সংঘর্ষে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) সফিকুল ইসলামসহ ৫ পুলিশ সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
হাসিব আল আমিন/আরএআর