টানা বৃষ্টিতে নোয়াখালী জেলার আট উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এতে আতঙ্ক বাড়ছে পানিবন্দি ও বানভাসিদের। এখনও পানিবন্দি হয়ে আছেন ১২ লাখ মানুষ। সবচেয়ে বেশি পানি রয়েছে সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সদর, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলায়।

বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে জেলা ঘুরে দেখা গেছে, বৈরি আবহাওয়ার কারণেই স্থবিরতা বিরাজ করছে জনজীবনে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না অনেকেই। জীবিকার তাগিদে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঘর থেকে বের হয়েছেন রিকশাচালক ও শ্রমিকসহ খেটে খাওয়া মানুষেরা। রাস্তাঘাটে মানুষ কম থাকায় তারাও পড়েছেন চরম বিপাকে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও তেমন খোলেনি। অনেকই ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া টানা বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।

স্থানীয়রা বলছেন, নিচু এলাকাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি চরম অবনতি হয়েছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় জলাবদ্ধতার পানি নামছে না। নতুন করে বৃষ্টি হওয়ায় ভোগান্তি আরও বেড়েছে।

জেলা প্রশাসকের তথ্য মতে, নোয়াখালীর ৮ উপজেলার ৮৭ ইউনিয়নের প্রায় ১২ লাখ ৫ হাজার ৩০০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। ১২৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ৯ হাজার ৩২০ জন মানুষ। 

সদর উপজেলার দরবেশপুর গ্রামের গৃহিণী বিবি রহিমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্যার পানি আবার বাড়ছে। বৃষ্টি না হলেও কমে না, কারণ পানি নামার রাস্তা বন্ধ। টানা বৃষ্টি হওয়ায় সব ধরনের কাজ বন্ধ। জনজীবন একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। 

ফাইয়াজ ইফতি নামের বেগমগঞ্জের এক বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বেশ কিছু দিন সড়কে পানি একদম ছিল না। সবগুলো সড়ক প্রায় শুকিয়ে গিয়েছিল। এবার টানা দুদিনের বৃষ্টিতে রাস্তা এবং বাসা পানির নিচে চলে গেছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হচ্ছে।  আল্লাহ সহায় হোন।

জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত দুদিন নোয়াখালীতে টানা বৃষ্টি হয়েছে। ফলে স্বাভাবিক উচ্চতা থেকে অনেক বেশি পানি বেড়েছে। এছাড়াও নোয়াখালীতে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস রয়েছে। দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। আগামী পাঁচ দিনের শেষের দিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।

নোয়াখালী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আঁখিনূর জাহান নীলা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্যার পানি কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু গত দুদিনের টানা বর্ষণে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও নোয়াখালী পৌরসভা এলাকায় পানি বেড়েছে। 

জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ত্রাণ কার্যের জন্য আমরা ৫৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকা, ১ হাজার ৭৭৩ মেট্রিকটন চাল, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৫ লাখ টাকার শিশুখাদ্য ও ৫ লাখ টাকার গোখাদ্য বিতরণ করেছি। এখনও সাড়ে ১৭ লাখ টাকা, ২৬ মেট্রিক টন চাল, ১০ লাখ টাকার শিশুখাদ্য ও ১০ লাখ টাকার গোখাদ্য মজুদ রয়েছে। বানভাসি কোনও মানুষ যাতে খাদ্যাভাবে কষ্ট না পান সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

হাসিব আল আমিন/এমএসএ