নাটোরের গুরুদাসপুরে একটি ক্লিনিকে সাথী খাতুন (১৮) নামের এক অন্তঃসত্ত্বার শরীরে ভুল রক্ত প্রয়োগে গর্ভে আট মাস ২১ দিন বয়সী শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার চাঁচকৈড় বাজারের ওই ক্লিনিকটি সিলগালা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ক্লিনিকটিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুজাহিদুল ইসলাম, গুরুদাসপুর থানার উপ-পরিদর্শক মো. মাসুদ রানা।

ভুক্তভোগী সাথী উপজেলার সাবগাড়ী গ্রামের মো. সালামের মেয়ে ও খাইরুল ইসলামের স্ত্রী।

জানা গেছে, গত রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে রক্তশূন্যতা দেখা দেওয়ায় গুরুদাসপুর পৌর সদরের চাঁচকৈড় বাজারের নিউ আলপনা ক্লিনিকে অন্তঃসত্ত্বা সাথীকে ভর্তি করান তার স্বামী খায়রুল ইসলাম। সেখানে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করে ‘এ পজেটিভ’ বলা হয়। তাৎক্ষণিক ‘এ পজেটিভ’ গ্রুপের এক ব্যাগ রক্ত সাথীর শরীরে প্রয়োগ করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। রক্ত প্রবেশের পরপরই তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয় এবং শরীরজুড়ে লাল চাকার মতো হয়ে যায়।

একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় গর্ভের শিশুর নড়াচড়া। পরিস্থিতি খারাপ হলে সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে স্ত্রী সাথীকে গুরুদাসপুরের হাজেরা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরীক্ষার পর জানতে পারেন স্ত্রীর শরীরে ভুল রক্ত প্রয়োগ করায় গর্ভের সন্তান মারা গেছে।

হাজেরা ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল ইসলাম সাগর বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ওই নারীকে আমাদের ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর পুনরায় রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করে দেখা যায়, অন্তঃসত্ত্বা নারীর রক্তের গ্রুপ ‘ও পজেটিভ’। অন্য ক্লিনিক থেকে ভুল রক্ত প্রয়োগ করায় সাথীর শরীরে নানা ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে আমরা সোমবার রাত ৯টার দিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে গর্ভের মৃত শিশুটি বের করি। উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার দুপুরে সাথীকে রাজশাহীতে পাঠানো হয়েছে।

ভুক্তভোগী ওই নারীর স্বামী খায়রুল ইসলাম জানান, মৃত সন্তানকে নিয়ে তিনি সোমবার রাতেই থানায় হাজির হন। পুলিশের পরামর্শে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। বর্তমানে শিশুটিকে মর্গে রেখে স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে রয়েছেন তিনি। এ ঘটনায় তিনি নিউ আলপনা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিচার দাবি করেন।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুল ইসলাম বলেন, ক্লিনিকটি সিলগালা করা হলেও কর্তৃপক্ষ পলাতক থাকায় অন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। তাছাড়া, গুরুদাসপুরের বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে।

গুরুদাসপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম সরোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ঘটনা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। শিশুটির ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গোলাম রাব্বানী/কেএ