ভূগর্ভস্থ পানির পাইপ ফেটে যাওয়ায় তীব্র পানির সংকটে পড়েছে ১০০ শয্যার বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল। গত দুই দিন হাসপাতালে পানি না থাকায় রোগী, স্বজন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মানবেতর পরিস্থিতি অতিবাহিত করেছে। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকল্প ব্যবস্থায় স্বল্প পরিমানে পানির ব্যবস্থা করা গেলেও তা অপ্রতুল এবং অস্থায়ী বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সর্বশেষ তথ্য অনুসারে মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত দেড় শতাধিক রোগী ভর্তি রয়েছে হাসপাতালটিতে। এর সঙ্গে রোগীর স্বজন, দায়িত্বরত চিকিৎসক, নার্স, স্টাফ এবং কোয়ার্টারে অবস্থানকারী মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক মানুষ হাসপাতালের পানির ওপর নির্ভরশীল।

চিকিৎসাধীন রোগী হারুন হাওলাদার বলেন, পানি না থাকায় তিন দিন ধরে গোসল করতে পারেনি। টয়লেট করতে হলে বাইরে থেকে পানি কিনে আনতে হয়। পানি না থাকায় টয়লেটের দুর্গন্ধে পুরো হাসপাতালে অবস্থান করা দুরুহ হয়ে পড়েছে।

আরেক রোগী আব্দুল্লাহ বলেন, হাসপাতালটিতে কোনো পানিই নেই। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ডায়রিয়া ও গাইনি বিভাগে। ওই ওয়ার্ডগুলোতে রোগীরা মানবেতরভাবে আছে।

রোগীর স্বজন সাবিনা জানান, আগে এক দিন পানি ছিল না। সোমবার থেকে পানির কলে বালু ও ময়লা আসছে। ওই পানি খাওয়া তো দূরের কথা ব্যবহারও সম্ভব নয়। মাত্রা অতিরিক্ত বালু উঠার কারণে ব্যবহারের পর পানি নেমে যাওয়ার সচল লাইন অচল হয়ে গেছে। বেসিনগুলোতে হাত ও মুখ ধোয়া যাচ্ছে না।

বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, আজকে (বুধবার) বিকল্প একটি মটর দিয়ে কিছু পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই পানিতে পুরো হাসপাতালের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। তাছাড়া ওই মটরটিও যে কোনো সময়ে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তাছাড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে জানালে তারা গতকাল এসে চেষ্টা করেছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে। কিন্তু পানি উত্তোলনের নলকূপের পাইপ ফেটে যাওয়ায় ময়লা, বালু উঠছে। এই পানি ব্যবহার উপযোগী না।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের ঠিকাদার মো. রেজাউল করিম পলাশ জানান, খবর পেয়ে দুই ঘণ্টার মধ্যে বিকল্প মটর থেকে পানি তুলে আপতত সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। নতুন নলকূপ বসালে স্থায়ীভাবে সমস্যার সমাধান হবে।

বরিশাল স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, হাসপাতালের পানি উত্তোলনের হাউজিংয়ের গভীরের পাইপ ফেটে গেছে। গতকাল আমরা চেষ্টা করেছি, কিন্তু পাইপ এমনভাবে ভেঙে গেছে যে পানি উত্তোলন করতে গেলে ময়লা, বালু উঠছে। আপতত আরেকটি মটর থেকে পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে তা স্থায়ী সমাধান নয়। এখন নতুন করে নলকূপ বসাতে হবে। এজন্য এস্টিমেট প্রস্তুত করছি। অনুমোদন পেলেই নতুন নলকূপ বসানোর কাজ শুরু করা হবে।

বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান বলেন, জেনারেল হাসপাতালের পানিতে বালু ও কাদা উঠছে বিষয়টি শোনার পর মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। স্থায়ীভাবে সমস্যার সমাধানে কাজ চলছে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর