সংস্কারের অভাবে খানাখন্দে ভরা বরগুনার ৪৭৭ কিলোমিটার সড়ক
বরগুনা পৌরসভাসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৪৭৭ কিলোমিটার পাকা সড়কে সংস্কারের অভাবে সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় অসংখ্য খানাখন্দ। এসব সড়কে চলতে গিয়ে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ভোগান্তিসহ প্রায় সময়ই ঘটছে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা।
তবে বরগুনার এলজিইডি অফিসের তথ্য মতে সংস্কার করতে যে পরিমাণ বরাদ্দের প্রয়োজন, সে তুলনায় বরাদ্দ খুবই কম থাকায় এক সঙ্গে করা যাচ্ছে না সব সড়কে সংস্কার।
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরগুনায় মোট ১ হাজার ৪৩০ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পরপর এসব সড়ক সংস্কার করার প্রয়োজন হয়। হিসেব অনুযায়ী চলতি বছরে বরগুনায় সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে প্রায় ৪৭৭ কিলোমিটার সড়কের। তবে এ সংস্কার করতে ৩১০ কোটি টাকার পরিমাণ বরাদ্দ প্রয়োজন হলেও তার বিপরীতে বরাদ্দ পাওয়া গেছে মাত্র ৩৫ কোটি টাকা। যা দিয়ে জেলায় মাত্র ৭০ কিলোমিটারের মতো সড়ক সংস্কার করা সম্ভব। এ কারণেই অর্থ সংকটে অধিক গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া ছাড়া সব সড়কের সংস্কার করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন এলজিইডি।
সরেজমিনে বরগুনা পৌরসভা এবং সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রধান কয়েকটি সড়ক ছাড়া উঠে গেছে অধিকাংশ সড়কের পিচ ঢালাই। দীর্ঘদিন ধরেই এসব অনেক সড়কেই সংস্কার করা হয়নি। এতে সড়কের বিভিন্নস্থানে ছোট বড় অসংখ্য গর্ত তৈরি হয়ে যানবাহন চলছে হেলেদুলে। দিনের পর দিন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এছাড়া গাড়ির চাকা গর্তে পড়ে প্রায় সময় ঘটছে দুর্ঘটনা।
বরগুনা পৌরসভা সংলগ্ন সদর উপজেলার ২নং গৌরীচন্না ইউনিয়নের খেজুরতলা নামক এলাকার প্রধান একটি সড়কে দীর্ঘ প্রায় ৭-৮ বছরেও হয়নি পূর্ণাঙ্গ কোনো সংস্কার।
ওই সড়কে নিয়মিত চলাচলে ভোগান্তির শিকার স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে মো. তারেক মিরাজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই সড়ক দিয়ে আগে তিন চারবার বাজারে যাওয়াআসা করতাম। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এ সড়কটির অবস্থা খুব খারাপ থাকায় এখন বাধ্য হয়ে একবার বাজারে যাই। এছাড়া গাড়িতে চলাচলের সময় যখন গাড়ির চাকা সড়কে থাকা গর্তে পড়ে তখন যে ঝাঁকি লেগে তাতে শরীর ব্যাথা হয়ে যায়। আমাদের একটাই চাওয়া যতদ্রুত সম্ভব এ সড়কটি সংস্কার করা হোক।
একই এলাকার বাসিন্দা মো. তৈয়বুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বয়স ৭০ বছর। পৌরসভার সুপারভাইজার পদে ছোট একটি চাকরির সুবাদে প্রতিদিন প্রায় চার থেকে পাঁচবার এ সড়ক দিয়ে সাইকেল চালিয়ে আমাকে যাওয়া আসা করতে হয়। বর্তমানে আমাদের রাস্তার যে অবস্থা তাতে ঠিকভাবে সাইকেল চালানোও সম্ভব না। বিশেষ করে রাতের বেলায় মাঝে মধ্যে সাইকেল নিয়ে পড়ে যাতে হয়।
মো. আসাদ পেশায় একজন অটোরিকশা চালক। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ সড়কে গাড়ি চালাতে গিয়ে নিজের শরীরের যেমন সমস্যা হয় তেমনি গাড়িরও ক্ষতি হয়। যা আয় করি তা গাড়ির পেছনেই খরচ হয়।
বরগুনার পিটিআই এলাকার বাসিন্দা মো. পান্না মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, এলাকার রাস্তার অবস্থা খারাপ থাকায় আমরা খুব সহজে গাড়িতে নিয়ে বাজারে যেতে এবং আসতে পারি না। ভাঙা রাস্তায় কেউ গাড়ি নিয়ে আসতে চায় না যদিও কেউ আসে তাহলে তাদেরকে বেশি টাকা ভাড়া দিতে হয়।
এ বিষয়ে বরগুনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বরাদ্দ কম থাকায় গুরুত্ব বিবেচনায় যেসব সড়ক দিয়ে বেশি যানবাহন চলাচল করে সেই সড়ক ছাড়া অন্য সব সড়ক সহজে সংস্কার করতে পারি না। বরগুনা জেলায় যদি সংস্কারের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হয়, তাহলে আমরা পর্যায়ক্রমে সব সড়কের সংস্কার সম্পন্ন করতে পারব।
আব্দুল আলীম/আরকে